যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি। সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছেন তিনি। মামদানির জয়ে নিউইয়র্ক প্রথমবারের মতো একজন মুসলিম মেয়র পেল।
জোহরান মামদানি কে?
জোহরান মামদানি উগান্ডায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবের কিছু সময় কেটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে। মাত্র সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে নিউইয়র্কে আসেন তিনি। শিক্ষা, সংগ্রাম ও সামাজিক ন্যায়ের চেতনায় বেড়ে ওঠা এই তরুণ এখন নিউইয়র্কের নেতৃত্বে।
তাঁর বাবা মাহমুদ মামদানি একজন উগান্ডার শিক্ষাবিদ এবং নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মা মীরা নায়ার বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, যার নির্মিত Monsoon Wedding ও The Namesake চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। এমন প্রগতিশীল পরিবারের সন্তান হিসেবেই জোহরান ছোটবেলা থেকেই সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার মূল্যবোধে বড় হয়েছেন।
রাজনীতিতে প্রবেশের আগে জোহরান ছিলেন একজন হাউজিং কাউন্সেলর। তিনি নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য সাশ্রয়ী আবাসন এবং ভাড়াটিয়াদের অধিকার নিয়ে কাজ করতেন। ২০১৯ সালে তিনি প্রথমবারের মতো নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি হয়ে ওঠেন প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটদের অন্যতম মুখপাত্র।
মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির প্রচারণা ছিল ভিন্নধর্মী। ধনী ও অভিজাত শ্রেণির বিপরীতে শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠ হিসেবে তিনি সামনে আসেন। তাঁর নির্বাচনী স্লোগান ছিল— “A City for All, Not Just for the Few.”
নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে তিনি নিজে শহরের রাস্তায়, সুপারমার্কেটে, রেডিও শোতে, এমনকি ইউনিয়ন স্কয়ারের ফ্রিস্টাইল র্যাপ ব্যাটলেও অংশ নিয়েছেন। তরুণ ভোটার ও অভিবাসীদের সমর্থনেই তিনি জয় ছিনিয়ে নেন।
জোহরান মামদানি আগামী বছরের ১ জানুয়ারি মেয়র হিসেবে শপথ নেবেন। তিনি এমন একটি শহরের নেতৃত্ব নিতে যাচ্ছেন, যেখানে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ বাস করেন এবং বার্ষিক বাজেট ১১ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। তাঁর অঙ্গীকার— নিউইয়র্ককে একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সবার জন্য সমান শহরে রূপান্তর করা।
ব্যক্তিগত জীবনে জোহরানের স্ত্রী রামা দুয়াজি একজন সিরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন শিল্পী। টেক্সাসে জন্ম নেওয়া রামা এখন নিউইয়র্কের ফার্স্ট লেডি হতে চলেছেন। মাত্র ২৮ বছর বয়সে তিনি জেন-জি প্রজন্মের প্রথম নারী ফার্স্ট লেডি হবেন।
জোহরান মামদানি শুধু রাজনীতিক নন, একজন র্যাপারও। সমাজে বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে র্যাপ গানের মাধ্যমে তিনি তরুণদের সচেতন করে তুলেছেন। তাঁর এই যাত্রা— উগান্ডার এক প্রবাসী শিশুর থেকে শুরু করে নিউইয়র্কের মেয়র হওয়া পর্যন্ত— আমেরিকান স্বপ্নের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
