অবৈধ অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আহ্বান মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

Illegal immigrants Malaysia

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুতিন ইসমাইল। বুধবার (১২ মার্চ) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যারা দেশে ফিরতে চান, তারা যেন চলমান অভিবাসী প্রত্যাবাসন কর্মসূচির সুযোগ গ্রহণ করেন।

বিবৃতিতে জানানো হয়, অবৈধ অভিবাসীদের জন্য চলমান প্রত্যাবাসন কর্মসূচির মেয়াদ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যারা এ সুযোগ গ্রহণ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে যারা অবৈধভাবে মালয়েশিয়া ছাড়ার চেষ্টা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ান মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ঈদকে সামনে রেখে শুরু হওয়া বিশেষ অভিযানের লক্ষ্য আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবিলা করা এবং অবৈধ অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ রোধ করা। এই অভিযানের মধ্যেই ইমিগ্রেশন পুলিশ অবৈধ শ্রমিক ও বসবাসকারীদের ধরতে প্রতিদিন সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে। ফলে মালয়েশিয়ায় থাকা বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

২.৫ লাখ অভিবাসী ইতোমধ্যে ফিরেছেন

মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক জাকারিয়া শাবান জানিয়েছেন, চলমান প্রত্যাবাসন কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৩২ জন অবৈধ অভিবাসী নিজ দেশে ফিরে গেছেন। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও পাকিস্তানের নাগরিকরাই বেশি।

২০২৪ সালের ১ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১৫টি দেশের অভিবাসীরা স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফেরার জন্য নাম নিবন্ধন করেছেন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় ২৩ লাখ বৈধ বিদেশি শ্রমিক কাজ করছেন।

মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবেশ, বৈধ অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত সময় থাকা, পাস শর্ত লঙ্ঘন এবং অবৈধভাবে কাজ করা—এইসব অপরাধে ৫০০ রিঙ্গিত পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হচ্ছে। সরকার প্রত্যাবাসন কর্মসূচির আওতায় স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণকারীদের দেশে ফেরার সুযোগ দিলেও, যারা এই সুযোগ নিচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কতজন বাংলাদেশি এখন পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যারা প্রত্যাবাসন কর্মসূচির আওতায় দেশে ফিরছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই কাগজপত্রবিহীন বা কর্মহীন। অনেক নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ফ্রি ভিসার নামে কলিং ভিসায় লোক নিয়ে এসে কাজ না দেওয়ায়, অনেকে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরছেন।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ১৯৫৯/৬৩ সালের অভিবাসন আইন, ১৯৬৬ সালের পাসপোর্ট আইন এবং ১৯৬৩ সালের অভিবাসন বিধিমালা অনুযায়ী দেশটির অভিবাসন আইন লঙ্ঘনকারী যেকোনো বিদেশির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—প্রত্যাবাসন কর্মসূচির আওতায় দেশে ফিরবেন নাকি কঠোর আইনি ব্যবস্থার মুখে পড়বেন। দেশটির সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যে কঠোর মনোভাব নিয়েছে, তাতে শিগগিরই আরও কঠোর অভিযান শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।