পর্তুগালে অভিবাসী হয়ে আসা অনেক বাংলা ভাষাভাষী ব্যক্তির স্বপ্ন থাকে—একটি ভালো চাকরি, স্থিতিশীল আয়, আর একটু উন্নত জীবন। কিন্তু বাস্তবতা অনেক সময় ভিন্ন। পর্তুগিজ ভাষা না জানলে ভালো চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে অনেকেই বাধ্য হন ফুড ডেলিভারি, কৃষিকাজ কিংবা নির্মাণশিল্পে কাজ করতে—যেখানে বেতন কম, পরিশ্রম বেশি এবং জীবনযাত্রার মান অনেক নিচে।
পর্তুগালে বাংলা ভাষাভাষীদের একটি বড় অংশ ফুড ডেলিভারি বা কৃষিকাজের মতো খাতে যুক্ত হন। এই কাজগুলো সাধারণত শারীরিকভাবে কষ্টকর এবং জীবনযাত্রার মান অনেক নিচু। বিশেষ করে ফল সংগ্রহের মতো কৃষিকাজে কাজের চাপ থাকলেও বেতন আশানুরূপ নয়। এছাড়া, ডেলিভারি কাজ সবসময় সুনিশ্চিত না হওয়ায় অনেকেই আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে পর্তুগালের পর্যটনকেন্দ্রগুলো কিছুটা আশার আলো হয়ে উঠছে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য। জনপ্রিয় পর্যটন এলাকাগুলোর মধ্যে আলগার্ভ, আলবুফেরা, ফারো, লাগোস, কাসকাইশ ও সিন্ত্রা অন্যতম, যেখানে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকলেই চাকরির সুযোগ অনেক বেশি। এসব অঞ্চলে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট এবং পর্যটনসেবা-ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে ইংরেজিভাষী কর্মী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ফলে পর্তুগিজ ভাষা না জানলেও, শুধুমাত্র ইংরেজির ওপর ভর করেই এই এলাকাগুলোতে বাংলাদেশিদের জন্য গড়ে উঠছে নতুন কর্মসংস্থানের দিগন্ত।
এই বাস্তবতার একটি জীবন্ত উদাহরণ আবু সুফিয়ান। পর্তুগালে আসার পর প্রথম চার মাস কোনো কাজ খুঁজে পাননি তিনি। পরে বাধ্য হয়ে ফুড ডেলিভারিতে যুক্ত হন, কিন্তু দীর্ঘ সময় প্রতিকূল আবহাওয়ায় কাজ করেও সন্তোষজনক বেতন পাননি। হতাশ হয়ে তিনি কৃষিকাজে যান, যেখানে জীবনযাত্রার মান আরও নিচে নেমে যায়। পরে তিনি একটি রেস্টুরেন্টে সিভি জমা দেন এবং দ্রুতই চাকরির অফার পান। সেখানে বেতনও ভালো, কর ব্যবস্থাও সহজতর। এখন তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করছেন এবং এটি তার জীবনে একটি আশার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য এই ঘটনা একটি শিক্ষণীয় বার্তা: পর্তুগিজ ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকলে পর্তুগালের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভালো চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ভাষাগত দক্ষতা বাড়িয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে গেলে চাকরি পাওয়া অনেক সহজ হতে পারে।