বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই এখনো জনগণের কাছে ভালো সমাধান বলে মন্তব্য করেছেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম আল–জাজিরার ‘টক টু আল–জাজিরা’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। রোববার আল–জাজিরার ওয়েবসাইটে ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ?’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে উপস্থাপক অধ্যাপক ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ‘মধুচন্দ্রিমা’ শেষ হয়েছে কি না এবং দেশ এখন বড় বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে কি না। উত্তরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে এখনো মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তাদের জন্য ভালো সমাধান। জনগণ এখনো বলেনি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সরে যেতে দাও বা আজই নির্বাচন চাই। বরং এখনো তারা এই ব্যবস্থার ওপর আস্থাশীল।”
সাক্ষাৎকারে বিগত দিনের অনিয়ম–দুর্নীতি দূর করে দেশে অর্থবহ সংস্কার এবং এযাবৎকালের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, যদি নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হয়, তাহলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “নির্বাচন কোনোভাবেই জুনের পরে যাবে না।”
আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে আল–জাজিরার উপস্থাপক প্রশ্ন করলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এই প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে সিদ্ধান্ত নেবে তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কি না। তারা এখনো কিছু ঘোষণা করেনি।” তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য পক্ষের ভূমিকা নিয়েও বিষয়টি নির্ভর করবে।
তবে উপস্থাপক যখন জানতে চান, তাহলে কি প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়টি পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন— তখন অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্ট করেন, “সেটা নয়। অন্যান্য দলও রয়েছে যারা বলতে পারে এই আইনের অধীনে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।”
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি সম্পূর্ণ আলাদা একটি ইস্যু। তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কাজ করছে। ইউনূস বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো এবং টেকসই পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।”
উল্লেখ্য, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এর আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।