চলমান বৈশ্বিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মাঝেও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ইউরোস্ট্যাট প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ইইউতে বাংলাদেশ ৮.০৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬.৫১ বিলিয়ন ডলার।
২৭ দেশের এই জোট ইইউ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। দেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশই আসে এই বাজার থেকে। গত বছরের শেষদিকের কিছুটা মন্দাভাব কাটিয়ে নতুন বছরের শুরুতেই এই প্রবৃদ্ধি শিল্প সংশ্লিষ্টদের মনে আশার সঞ্চার করেছে।
ইউরোস্ট্যাট জানায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে ইইউয়ের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি ১৪.২১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২.৪৯ বিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে রপ্তানি পরিমাণে ১৫.৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও গড় ইউনিট মূল্য ১.৪১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়া ইউরোপীয় বাজারে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। চীনের রপ্তানি ২১.৪৯ শতাংশ বেড়ে ৮.৩৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার রপ্তানি যথাক্রমে ২০.৫৮ শতাংশ, ২৩.৪২ শতাংশ ও ৩১.৭৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। তবে তুরস্কের রপ্তানি ৫.৪১ শতাংশ কমে ৩.১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশের নিট ও ওভেন পোশাক রপ্তানিতেও বড় অগ্রগতি দেখা গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) পোশাক খাত থেকে বাংলাদেশ ৩৬.৫৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ১৯.৬২ বিলিয়ন এবং ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৬.৯৪ বিলিয়ন ডলার।
বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, গ্যাস সংকট ও কারখানায় হামলার পরও আমরা রপ্তানি বাড়াতে পেরেছি। ২০২৫ সাল ভালো শুরু হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অনিশ্চিত।”
এদিকে বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল মনে করেন, “ইইউর আসন্ন নীতিমালা মেনে টেকসই উৎপাদন ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা গড়ে তুলতে না পারলে বাংলাদেশ সুবিধা হারাতে পারে। এখনই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।”