তারেক ও জুবাইদা রহমানের সাজা বাতিল: হাইকোর্টে বিচারিক আদালতের অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন

tarique zubaida court verdict

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে দিয়ে হাইকোর্ট তাদের খালাস দিয়েছেন। সোমবার প্রকাশিত ৫২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, বিচারিক আদালতে বিচার দ্রুতগতিতে ও আইন অমান্য করে সম্পন্ন হয়েছে, যা নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তোলে।

রায়ে বলা হয়েছে, মাত্র দুই মাস চার দিনে ৪২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং এরপর মাত্র ৮ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা বিচার ব্যবস্থায় “অসাধারণ দ্রুততা” হলেও এতে বিচারিক নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২৮ মে এই রায় দিয়েছিলেন।

❝জুবাইদা রহমানকে নোটিশ না দেওয়া আইন লঙ্ঘনের শামিল❞

দুদক আইনের ২৬(১) ধারায় অভিযুক্তকে নোটিশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও জুবাইদা রহমানকে কোনও নোটিশ না দিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছিল বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। হাইকোর্ট বলেছে, নোটিশ ছাড়া দোষী সাব্যস্ত ও সাজা দেওয়া আইনি দৃষ্টিতে টেকসই নয়।

রায়ে আরও বলা হয়েছে, অভিযোগ গঠনের সময় ফৌজদারি কার্যবিধির ২২১ ধারার বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি, এবং অভিযোগপত্র ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এসব কারণেই তারেক ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ টেকেনি।

❝প্রমাণ দিতে ব্যর্থ রাষ্ট্রপক্ষ❞

সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে হাইকোর্ট উল্লেখ করেছে, সাক্ষী ১ ও ৪২ ছাড়া বাকি কেউই আসামিদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জনের প্রমাণ দিতে পারেননি। ফলে মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।

❝আপিল না করেও খালাস পেলেন তারেক রহমান❞

যদিও তারেক রহমান ব্যক্তিগতভাবে আপিল করেননি, তবুও মামলায় নানা অসঙ্গতির কারণে পুরো রায় বাতিলযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় তিনি দুই ধারায় মোট ৯ বছরের সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন।

ডা. জুবাইদা রহমানের পক্ষে থাকা আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন,

“এই রায়ে প্রমাণ হয়েছে আমাদের যুক্তি আইনত সঠিক ছিল। তারেক ও জুবাইদার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছিল। বিচারিক আদালত যেন ‘মোমবাতি জ্বালিয়ে’ দ্রুত সাজা দিতে চেয়েছে।”

২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুদক রাজধানীর কাফরুল থানায় তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও তার মায়ের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা করে। এরপর ২০২৩ সালের ২ আগস্ট বিচারিক আদালত তারেক রহমানকে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় মোট ৯ বছরের সাজা দেন। ডা. জুবাইদা রহমানকে ২৭(১) ধারায় ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।