প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা ১০ বছর এবং স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

pm term limit police commission dialogue bangladesh

রাজনীতিতে জবাবদিহিতা এবং পেশাদার প্রশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বড় ধরনের প্রস্তাবের বিষয়ে একমত হয়েছে দেশের ৩০টি রাজনৈতিক দল। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের ১৯তম দিনে দলগুলো একমত হয়েছে—এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকতে পারবেন। একইসঙ্গে স্বাধীন ও জবাবদিহিমূলক পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়েও ঐকমত্য প্রকাশ করেছে অংশগ্রহণকারী দলগুলো।

কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ আজ রোববার আলোচনায় এ ঐকমত্যের কথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা একটা বিষয়ে একমত হয়েছি—এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।” এই প্রস্তাব সংলাপে উপস্থিত বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ৩০টি দলের পক্ষ থেকেই এসেছে বলে জানা যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা আগেই বলেছি, ১০ বছরের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না। এটি আমাদের প্রস্তাব। তবে সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নিয়ে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ হলে সেই শর্ত আমাদের জন্য বহাল থাকবে।”

স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাবে সমর্থন

এদিন সংলাপে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়েও বিস্তৃত আলোচনা হয়। আলোচনার শুরুতে কমিশন গঠনের প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পরে দলগুলো বিস্তারিত আলোচনা শেষে কমিশনের প্রস্তাবের মূল বিষয়গুলোতে একমত হয়।

আলী রীয়াজ জানান, “পুলিশের পেশাদারিত্ব, জবাবদিহিতা এবং সাধারণ নাগরিকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে স্বাধীন কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তায় রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে।”

প্রস্তাবিত বাংলাদেশ পুলিশ কমিশনের গঠন কাঠামো

  • কমিশনের নেতৃত্বে থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের বিচারপতি (বয়সসীমা ৭২)
  • সদস্য সচিব হবেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি (বয়সসীমা ৬২)
  • সদস্যদের মধ্যে থাকবেন:
    • সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিনিধি
    • স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার (বিরোধীদল থেকে)
    • একজন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী (কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা)
    • একজন মানবাধিকার কর্মী (কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা)
    • একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি

কমিশনে অন্তত দুইজন নারী সদস্য রাখার বিষয়েও খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। সদস্য বাছাইয়ের জন্য পৃথক কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছে, যেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও একজন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক থাকবেন।

আইনি কাঠামোর প্রস্তাব

কমিশনের দায়িত্ব, ক্ষমতা, অপসারণ পদ্ধতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিয়ম একটি পৃথক আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব পূর্ণকালীনভাবে কাজ করবেন, অন্য সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও প্রয়োজনে সম্মানী গ্রহণ করতে পারবেন।

এই আলোচনা ও ঐকমত্য দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের একটি সম্ভাব্য মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।