অভিবাসীরা পর্তুগালের অর্থনীতি ও শ্রমবাজারে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান: র‍্যান্ডস্ট্যাড রিসার্চ

Migration and the Labour Market

পর্তুগালের শ্রমবাজার ও অভিবাসীদের ভূমিকা নিয়ে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটির অর্থনীতি ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অভিবাসীরা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। জনপ্রিয় মানবসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান র‍্যান্ডস্ট্যাড রিসার্চ পরিচালিত “Myths and Realities About Migration and the Labour Market” শীর্ষক এ সমীক্ষায় অভিবাসীদের ঘিরে নানা প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়, অভিবাসীরা অনেক ক্ষেত্রে শ্রমবাজারে স্থানীয়দের চেয়ে বেশি সক্রিয় এবং তারা সেই খাতে বেশি কাজ করছেন যেখানে কর্মী সংকট রয়েছে।

তথ্য-উপাত্তে অভিবাসীদের বাস্তব চিত্র

পর্তুগালে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বিদেশি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮০০, যার মধ্যে ৩ লাখ ২ হাজার ২০০ জন কর্মরত এবং ৪৪ হাজার ৬০০ জন বেকার। কর্মরতদের মধ্যে পুরুষের হার ৫১.৩% এবং নারীর হার ৪৮.৭%। বেকারদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই (৪৩.৮%) লিসবনে অবস্থান করেন।

শ্রমবাজারে কোথায় বেশি নিয়োজিত

গবেষণায় উঠে এসেছে, বিদেশি কর্মীরা মূলত এমন খাতে কাজ করছেন, যেখানে পর্তুগিজদের আগ্রহ কম। যেমন:

  • হোটেল ও রেস্তোরাঁ খাতে বিদেশিদের অংশগ্রহণ ১৮.৩%, যেখানে পর্তুগিজদের মাত্র ৮.৭%।
  • পরিষেবা ও সাফাই কাজে বিদেশিদের অংশগ্রহণ ২০.৮%, যা স্থানীয়দের দ্বিগুণেরও বেশি।
  • নির্মাণ খাতে বিদেশিদের অংশগ্রহণ ১২%, যেখানে স্থানীয়দের হার ৮.৪%।

অন্যদিকে, জন প্রশাসন, স্বাস্থ্য, ও শিক্ষা খাতে বিদেশিদের অংশগ্রহণ মাত্র ৬%, যেখানে স্থানীয়দের হার ১১.৮%।

চাকরির ধরনে বৈষম্য স্পষ্ট

২০২৪ সালে বিদেশিদের মধ্যে অস্থায়ী চাকরির হার ছিল ৩৫.৮%, যা পুরো জনসংখ্যার তুলনায় দ্বিগুণ। একইভাবে, পার্ট-টাইম চাকরির ক্ষেত্রেও বিদেশিদের হার (১১.২%) বেশি, যেখানে জাতীয় গড় ছিল ৮.১%।

অতিরিক্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কমদক্ষ পেশায় নিয়োজিত

গবেষণায় দেখা গেছে, পর্তুগালে বসবাসরত অনেক অভিবাসী উচ্চশিক্ষিত। ৩১.৬% অভিবাসীর রয়েছে উচ্চশিক্ষা ডিগ্রি এবং ৪৩.৬% মাধ্যমিক বা পোস্ট-মাধ্যমিক শিক্ষিত। তবে এ যোগ্যতা যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। বিদেশিদের মধ্যে ৪২.৮% “ওভার-কোয়ালিফায়েড” অর্থাৎ কাজের তুলনায় বেশি যোগ্য, যেখানে পর্তুগিজদের মধ্যে এ হার মাত্র ১৫.৭%।

সামাজিক নিরাপত্তায় বড় অবদান

২০২৩ সালে অভিবাসীরা পর্তুগালের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ৩.৬৪৫ বিলিয়ন ইউরো অবদান রেখেছেন, আর পেয়েছেন মাত্র ৬৮৭ মিলিয়ন ইউরো। ফলে তাদের নিট অবদান ছিল প্রায় ২.৯৫৮ বিলিয়ন ইউরো।

চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে

যদিও অভিবাসীদের বেকারত্বের হার (১১.৯%) জাতীয় গড়ের (৬.৬%) চেয়ে বেশি, তবে দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্বের হার ১৬.৭ শতাংশ পয়েন্ট কম। এতে প্রমাণ হয় যে, তারা তুলনামূলক দ্রুত কর্মজীবনে ফিরে আসতে সক্ষম হন।

তবে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, বেকারত্বের হারের ঋতুভিত্তিক ওঠানামা এবং পেশাগত বৈষম্য এখনো অভিবাসীদের শ্রমবাজারে পূর্ণাঙ্গ ও ন্যায্য সংযুক্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অভিবাসনের প্রভাব

গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পর্তুগালে বৈধভাবে বসবাসরত বিদেশির সংখ্যা ১০ লাখ ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। স্থায়ী অভিবাসীর সংখ্যা ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৫৭, যা ২০১০ দশকের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।

বয়স কাঠামোতে ইতিবাচক ভূমিকা

অভিবাসীদের মধ্যে ২০ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের হার ৫৫%, যেখানে জাতীয় গড় মাত্র ২৯%। এটি এমন এক দেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যেখানে জন্মহার কম ও জনসংখ্যার বার্ধক্য দ্রুত বাড়ছে।