শতকোটি টাকা নিয়ে পালাল ফ্লাইট এক্সপার্ট!

দেশের অনলাইন ভিত্তিক অন্যতম জনপ্রিয় বিমান টিকিট বুকিং প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’-এর ওয়েবসাইট হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো গ্রাহক ও টিকিট বিক্রেতা এজেন্সি, যারা অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করে টিকিট বুক করেছিলেন।

শনিবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিলে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে দেখা যায়, বিপাকে পড়া অসংখ্য ব্যক্তি ও এজেন্সির প্রতিনিধিরা জড়ো হয়েছেন। এদের অনেকেই ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে জানান, তারা লাখ লাখ টাকার টিকিট বুক করলেও এখন তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

‘ইউনিয়ন ট্রাভেলস’ নামের একটি এজেন্সির মালিক কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “সব শেষ ভাই, আমার ২৫-৩০ লাখ টাকা নাই। আমি শেষ।” তিনি জানান, তার সব টিকিটই ফ্লাইট এক্সপার্টের মাধ্যমে কাটা ছিল। কিন্তু পরে জানতে পারেন সেগুলো প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব নয়, অন্য এজেন্সির মাধ্যমে নেওয়া।

২০১৭ সালের মার্চে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’। তারা দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের টিকিট বুকিংয়ের পাশাপাশি হোটেল রিজার্ভেশন, ট্যুর প্যাকেজ ও ভিসা প্রসেসিং সেবা দিত। কম খরচে সহজ টিকিট বুকিংয়ের সুবিধা থাকায় এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়।

তবে একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি এয়ারলাইনসের কাছ থেকে নয়, বরং দুটি মধ্যস্থতাকারী এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করত। বর্তমানে সেই দুটি এজেন্সি টিকিট ফেরত দিয়ে নিজেদের অর্থ তুলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, ফ্লাইট এক্সপার্টের একটি অভ্যন্তরীণ ফেসবুক গ্রুপে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সালমান বিন রশিদের একটি বার্তার স্ক্রিনশট পাওয়া গেছে। সেখানে তিনি দাবি করেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। নিরাপত্তা ও মানসিক চাপে তিনি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

তবে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে সালমান বিন রশিদ পালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “ক্রেতারা টাকা দেওয়ার সঙ্গেই টিকিট পেয়ে যান। এখানে পালানোর কিছু নেই।” বরং তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানটির হেড অব কমার্শিয়াল সাঈদ আহমেদ সরবরাহকারীদের টিকিট রিফান্ড করতে বলে গ্রাহকদের বিপদে ফেলেছেন।

অন্যদিকে, সাঈদ আহমেদ বলেন, “মূল মালিকপক্ষই টাকা নিয়ে দেশ ছেড়েছে।” তিনি জানান, মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে সালমান বিন রশিদ কাউকে কিছু না জানিয়ে পরিবারসহ বিদেশে চলে গেছেন।

মতিঝিল সিটি সেন্টারের নিরাপত্তাকর্মীরাও জানিয়েছেন, সালমান নিয়মিত অফিসে এলেও গত তিন দিন ধরে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।