দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সপ্তদশ এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারত–পাকিস্তান লড়াই জমে উঠেছিল শ্বাসরুদ্ধকর আবহে। উড়ন্ত সূচনায় এগিয়ে থেকেও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পাকিস্তান থেমে যায় ১৪৬ রানে। জবাবে ভারতের শুরুতেও চাপ এলেও শেষ পর্যন্ত তিলক ভার্মার ফিফটিতে ভর করে ২ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় ভারত। এই জয়ের মধ্য দিয়ে নবমবারের মতো এশিয়া কাপ শিরোপা নিজেদের করে নেয় তারা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান ফাইনালে শুরু থেকেই আধিপত্য দেখাতে থাকে। মাত্র ১১.২ ওভারে তারা তুলে ফেলে ১০০ রান। ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান বুমরাকে টানা তিন ছক্কা মেরে রেকর্ড গড়েন। এমন শক্ত ভিত গড়ে তোলার পরও পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ হঠাৎ ভেঙে পড়ে।
কুলদীপ যাদব শুরুতে ব্যয়বহুল হলেও পরে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করেন। মাত্র ৭ রানে নেন ৪ উইকেট। শেষ ৯ উইকেট মাত্র ৩৩ রানে হারিয়ে পাকিস্তান অলআউট হয় ১৪৬ রানে।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতও হোঁচট খায়। মাত্র ২০ রানে হারায় ৩ উইকেট—অভিষেক শর্মা (৫), সূর্যকুমার যাদব (১) এবং শুভমান গিল (১২)। পাকিস্তানের পেস আক্রমণে চাপে পড়ে যায় ভারতীয় শিবির।
সূর্যকুমার যাদবের দুর্বল ফর্ম চলমান থাকে; এ বছর ১১ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ মাত্র ১০০ রান। ফাহিম আশরাফ শুরুতেই দু’বার আঘাত করে ভারতকে সমস্যায় ফেলে দেন।
চাপের মুহূর্তে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তিলক ভার্মা। ষষ্ঠ ওভারে চার–ছক্কায় চাপ কমান তিনি। সঞ্জু স্যামসনের সঙ্গে বোঝাপড়ার জুটি গড়ে ম্যাচে ফেরান ভারতকে। যদিও স্যামসন সহজ এক ক্যাচ ফেলে দেওয়ায় রক্ষা পান, পরে ২৪ রানে আউট হলেও তার অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
তিলক ধীরে ধীরে ইনিংস গড়ে তুলতে থাকেন। ১৫তম ওভারে হারিস রউফকে চার–ছক্কায় ১৭ রান নিয়ে ব্যক্তিগত ফিফটি পূর্ণ করেন। পুরো ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং ছিল ভারতের জন্য আস্থার প্রতীক।
শেষদিকে শিবম দুবে ঝড় তোলেন। তাঁর সঙ্গে তিলকের ৬০ রানের জুটি ভারতের কাজ সহজ করে দেয়। দুবে আউট হলেও তিলক শেষ পর্যন্ত থেকে যান। শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ১০ রান, যা তিলক চার ও ছক্কায় নিয়ে আসেন ২ বল হাতে রেখেই।
পুরো ইনিংসে তিলক ভার্মা খেলেন ৫৩ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কার অনবদ্য ইনিংস। ম্যাচের নায়ক হয়ে ওঠেন তিনিই।
যে কোনো ফরম্যাটে সর্বশেষ পাকিস্তান ভারতকে হারিয়েছিল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর টানা ৮ ম্যাচে জয়ী হলো ভারত। প্রথমবার এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয়েও সেই খরা কাটাতে ব্যর্থ হলো সালমান আলি আগার দল।
এই জয়ে ভারত নবমবারের মতো এশিয়া কাপ শিরোপা জিতল। টি–টোয়েন্টি সংস্করণে এটি তাদের দ্বিতীয় জয়। ওয়ানডে সংস্করণেও তারা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের পর আবারও প্রমাণ হলো, ভারত–পাকিস্তান লড়াই মানেই ক্রিকেট অনিশ্চয়তার পরিপূর্ণ নাটক।