চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মোটরসাইকেলযোগে আসা অস্ত্রধারীদের ছোড়া গুলিতে মুহাম্মদ আবদুল হাকিম (৫২) নামের এক ব্যবসায়ী নিহতের ঘটনায় বিএনপির তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নিহত হাকিমকে ‘বিএনপি নেতা’ দাবি করলেও, কেন্দ্রীয় বিএনপি জানিয়েছে—তিনি দলের কেউ নন।
বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আসামি করা হবে।”
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক বিবৃতিতে এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান। তবে তিনি বলেন, “হত্যাকারী ও নিহত কেউই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন।”
এ বিষয়ে পদ স্থগিত হওয়া বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন,
“উনি (রিজভী) কিভাবে বললেন আবদুল হাকিম বিএনপির কেউ নন, তা আমি জানি না। যদি হাকিম বিএনপি না হন, তবে বিএনপি কারা?”
বুধবার বিকেল ৫টায় রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন দরগাহ ডা. মোহাম্মদ মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে নিহতের দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, তার পরিবার ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
এদিকে, নিহতকে বিএনপি নেতা উল্লেখ করে রাউজান উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনসমূহের উদ্যোগে মুন্সির ঘাটা এলাকায় চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কেও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত আবদুল হাকিম রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে তার কোনো আনুষ্ঠানিক দলীয় পদ ছিল না।
তিনি ভেষজ পণ্যের ব্যবসা, গরুর খামার ও কর্ণফুলী নদী থেকে বালু উত্তোলনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের মদুনাঘাট ব্রিজসংলগ্ন হাটহাজারী এলাকায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে আবদুল হাকিমকে। ঘটনাস্থলের ৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে গুলির শব্দ ও মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সহিংসতায় অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৯টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন।