উন্নত জীবনের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি, ফিরলেন হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরে

indian youth deported from usa handcuffed

উন্নত জীবনের আশায় জমি বিক্রি করে, ঘর বন্ধক রেখে এবং দালালদের (এজেন্টদের) হাতে জীবন সঁপে দিয়েছিলেন ভারতের হরিয়ানার ৫০ তরুণ। কিন্তু তাঁদের সেই স্বপ্ন শেষে পরিণত হলো দুঃস্বপ্নে। অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অভিযোগে তাঁদের দেশ থেকে বহিষ্কার করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। রোববার (২৬ অক্টোবর) ভোরে ভারতে ফেরার সময় তাঁদের হাতে হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি ছিল।

ফেরত আসা তরুণদের অনেকেই জানান, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়ের পর তাঁরা ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছেন। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে।

হরিয়ানার প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ফেরত আসা ৫০ জনের মধ্যে ১৬ জন কারনাল, ১৪ জন কাইথাল, ৫ জন কুরুক্ষেত্র এবং ১ জন পানিপথের বাসিন্দা। সবাই মানব পাচারের মাধ্যমে ‘ডানকি রুট’ ব্যবহার করে দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার দেশ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। কেউ কেউ কয়েক বছর ছিলেন, কেউ আবার মাত্র কয়েক মাস।

কারনালের অঙ্কুর সিং (২৬) বলেন, “২০২২ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে আমার প্রায় ২৯ লাখ রুপি খরচ হয়েছিল। ব্রাজিলসহ দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ হয়ে যেতে চার মাস লেগেছিল। জর্জিয়ায় একটি মদের দোকানে কাজ করার সময় ধরা পড়ি।”

অঙ্কুর জানান, ফেব্রুয়ারিতে আটক হওয়ার পর তাঁকে কারাগারে রাখা হয় এবং ২৪ অক্টোবর দেশে ফেরার ফ্লাইটে তোলা হয়। ওই ফ্লাইটে পাঞ্জাব, গুজরাট, হায়দরাবাদ ও গোয়ার তরুণেরাও ছিলেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২,৫০০ ভারতীয় নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও গুজরাটের বাসিন্দা।

ফেরত আসা আরেক তরুণ, কারনালের পোপরা গ্রামের ২১ বছরের হুসন, যুক্তরাষ্ট্রে যেতে তিন একর জমি বিক্রি করেছিলেন। তাঁর কাকা সুরেন্দর সিং বলেন, “হুসনের যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই ধরা পড়ে। ফিরতে হলো হাতকড়া ও বেড়ি পরে।”

অন্যদিকে কাইথালের নরেশ কুমার বলেন, “২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দিল্লি থেকে রওনা হয়ে ব্রাজিল হয়ে ৬৬ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাই। এজেন্টরা আমার কাছ থেকে ৫৭ লাখ ৫০ হাজার রুপি নিয়েছিল। সুদে আরও টাকা ধার করতে হয়েছে।”

কাইথাল জেলার পুলিশ সুপার উপাসনা বলেন, “রোববার দিল্লি থেকে ফেরত আসা ১৪ জনকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সবাই ‘ডানকি রুট’ দিয়ে গিয়েছিলেন।”

জিণ্ড জেলার এসপি কুলদীপ সিং বলেন, “এই রুটে বিদেশে যাওয়া একটি গুরুতর অপরাধ। এটি শুধু পরিবারকে নিঃস্ব করে না, বরং জীবনকেও বিপন্ন করে তোলে। অনেকে পথে দুর্ব্যবহার ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়েন।”