সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে

sudan genocide

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া সুদানের গৃহযুদ্ধ আজ রূপ নিয়েছে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে। দেশটির সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)-এর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে এ যুদ্ধের সূচনা। কিন্তু দুই বছরের মাথায় এই সংঘাত এখন ভয়াবহ গণহত্যায় পরিণত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পশ্চিম দারফুরের প্রধান শহর এল-ফাশারে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে আরএসএফ। জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফ এবং তাদের সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বেসামরিক মানুষ, নারী ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করছে।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এল-ফাশারে এখন রাস্তাজুড়ে লাশ, পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত হাসপাতাল—সবকিছুই এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরছে।

গণহত্যার নেপথ্যে কে?

দারফুর অঞ্চলে চলমান হত্যাযজ্ঞের মূল অভিযুক্ত র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)। এ বাহিনীটি গঠিত হয়েছিল ২০১৩ সালে, কুখ্যাত জানজউইদ মিলিশিয়া থেকে। এই জানজউইদ মিলিশিয়াই ২০০৩ সালে দারফুর বিদ্রোহ দমনে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। তখন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে অ-আরব জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমানে আরএসএফের নেতৃত্বে আছেন জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি ‘হামেদতি’ নামে পরিচিত। তার নেতৃত্বেই আরএসএফ সেনারা দারফুর ও পশ্চিম সুদানে অ-আরব জাতিগোষ্ঠী, বিশেষত মাসালিত, ফুর, এবং জাঘাওয়া জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে আরএসএফ ও তাদের সহযোগীরা দারফুর অঞ্চলে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং দুই লাখের বেশি নারীকে যৌন নির্যাতনের শিকার করেছে।

গণহত্যার ধরন ও পদ্ধতি

সাক্ষাৎকারে বেঁচে যাওয়া শরণার্থীরা জানিয়েছেন, আরএসএফ সদস্যরা বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়, পালাতে চাওয়া মানুষদের গুলি করে হত্যা করে। শিশু ও বৃদ্ধদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে, নারীদের ওপর চালানো হয়েছে ভয়াবহ যৌন নির্যাতন।

এক ভুক্তভোগী নারী জাতিসংঘের তদন্তকারীদের বলেন,

“তারা আমাদের বলেছিল, আমরা যেন আরব সন্তান জন্ম দিই। কারণ অ-আরব জাতি সুদানে বাঁচার অধিকার রাখে না।”

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, এই হত্যাযজ্ঞের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে জাতিগত। মাসালিতসহ অন্যান্য অ-আরব জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করার নীতি অনুসরণ করছে আরএসএফ।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস সুদানের বর্তমান পরিস্থিতিকে “বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়” হিসেবে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘ জানায়, এখন পর্যন্ত সুদানে ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

এদিকে সুদান সরকার আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, তারা আরএসএফকে অস্ত্র, ড্রোন এবং অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে। তবে আমিরাত এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

২০২৪ সালে সুদান আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে মামলা করলেও আদালত সেটি গ্রহণ করেনি, কারণ “সুদান আইসিসির বিচারাধীন রাষ্ট্র নয়।”

দেশ বিভক্তির পথে সুদান

দীর্ঘ দুই বছরের লড়াইয়ে দেশটি এখন কার্যত দ্বিখণ্ডিত।

  • সুদানের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে উত্তর ও পূর্বাঞ্চল, যার মধ্যে লোহিত সাগর তীরবর্তী পোর্ট সুদান রয়েছে।
  • অন্যদিকে, আরএসএফ দখলে রেখেছে পশ্চিম দারফুর, কোরদোফান এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল।

এল-ফাশার দখলের পর থেকে আরএসএফ সেখানে “বিদ্রোহী প্রশাসন” গঠন করেছে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এটি ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদানের বিচ্ছিন্নতার পর দেশটির দ্বিতীয় বিভাজনের সূচনা।