ছুটির দিনে মাংস খাওয়া হলো না বাবা–ছেলের

father son dead on earthquake

ছুটির দিনের সকাল। পরিবারের জন্য ভালো কিছু রান্নার উদ্দেশ্যে মাংস কিনতে পুরান ঢাকার বাসা থেকে বের হয়েছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী আবদুর রহিম (৪৮)। সঙ্গে ছিলেন স্কুলপড়ুয়া তাঁর ছোট ছেলে আবদুল আজিজ রিমন (১২)। বংশালের কসাইটুলীর নয়নের মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই সাধারণ সকাল মুহূর্তেই পরিণত হয় নিদারুণ ট্র্যাজেডিতে।

আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকা। তীব্র ঝাঁকুনিতে কেপিগোজ স্ট্রিটের ২২/সি ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে। সরাসরি বাব–ছেলের ওপর পড়লে সেখানেই প্রাণ হারান তাঁরা। একই ঘটনায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলামও নিহত হন। তাঁর মা নুসরা আক্তার গুরুতর আহত হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রহিম ও তাঁর ছেলের লাশ সকাল থেকেই মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পড়ে ছিল। কিন্তু পরিবারের কেউ খবর পাননি। বেলা দুইটার দিকে রহিমের ছোট ভাই মো. নাসির ও বড় ভাই মো. গোলাম মোস্তফা হাসপাতালে এসে লাশ শনাক্ত করেন। ভাইয়ের নিথর দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা।

নাসির বলেন,
“আমার ভাই খুব ভালো মানুষ ছিল। দুই বছর আগে হজ করে এসেছে। আমার ভাইকে আল্লাহ জান্নাতবাসী করুন।”

আরেক ভাই ফিরোজ আলম আর্তনাদ করে বলেন,
“আমার ভাই আমার সবকিছু ছিল। আমাকে ছাড়া কোনো কাজ করত না। আমার ভাই…”

লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের বশিকপুর গ্রামের ছেলে রহিম পুরান ঢাকার গার্ডেন সিটিতে দীর্ঘদিন ধরে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। সুরিটোলা স্কুলের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন তাঁরা। সকালে রান্নার জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন থাকায় তিনি মাংস আনতে বেরিয়েছিলেন এবং সঙ্গে নিয়েছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণির ছেলে আজিজকে।

রহিমের ভাই নাসির জানান, ভূমিকম্পের পর মা ফোন দিয়ে জানান—সকাল থেকে রহিম ও আজিজের খবর পাওয়া যাচ্ছে না। খুঁজতে খুঁজতেই তারা মর্গে এসে মরদেহ খুঁজে পান।

ফিরোজ আলম জানান, রহিমের বড় ছেলে মাত্র এক মাস আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। মেজ ছেলে একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে পুরান ঢাকার ভবনের রেলিং ভেঙে নিচে পড়লে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। আহতদের মিটফোর্ড হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।