পর্তুগালের নাগরিকত্ব আইনের একাধিক ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করল সাংবিধানিক আদালত

lisbon court aima

পর্তুগালের সাংবিধানিক আদালত দেশটির নাগরিকত্ব আইন (Nationality Law)-এর সাম্প্রতিক সংশোধনীর একাধিক ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। আদালতের এই রায়ের ফলে বিতর্কিত সংশোধনীগুলো কার্যকর করা যাচ্ছে না এবং আপাতত আগের নাগরিকত্ব আইনই বহাল থাকছে।

পর্তুগালে নাগরিকত্ব প্রদান বর্তমানে ১৯৮১ সালের জাতীয়তা আইন (আইন নং ৩৭/৮১) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা একাধিকবার সংশোধিত হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধনী আনা হয় ২০২৫ সালের ২৮ অক্টোবর। তবে এর পরপরই, ১৩ নভেম্বর দেশটির পার্লামেন্টের তৃতীয় বৃহত্তম দল সোশ্যালিস্ট পার্টি (PS) আইনটি সাংবিধানিক আদালতে চ্যালেঞ্জ করে। দলটির অভিযোগ ছিল, নতুন সংশোধনীগুলো সংবিধানের সমতার নীতি, মৌলিক অধিকার সীমিত করার ক্ষেত্রে আনুপাতিকতার নীতি এবং অন্যান্য মৌলিক সাংবিধানিক নীতির পরিপন্থী।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে প্রস্তাব করা হয়েছিল—
নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বসবাসের সময়সীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা, আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সিপিএলপি (CPLP) দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৭ বছর করা; আবাসনের মেয়াদ গণনা শুরু হবে প্রথম রেসিডেন্স কার্ড ইস্যুর তারিখ থেকে, আবেদন জমা দেওয়ার তারিখ থেকে নয়; এবং গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত হলে নাগরিকত্ব বাতিল বা হারানোর সুযোগ রাখা।

সাংবিধানিক আদালত চারটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। এর মধ্যে একটি ছিল—যে কোনো ব্যক্তি যদি এমন অপরাধে দণ্ডিত হন, যার শাস্তি দুই বছর বা তার বেশি, তাহলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর্তুগালের নাগরিকত্ব পাওয়ার অযোগ্য হবেন। আদালত মত দেয়, এটি নাগরিকত্ব লাভের মৌলিক অধিকারের ওপর “অতিরিক্ত ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ” সীমাবদ্ধতা এবং সংবিধানের সেই নীতিরও লঙ্ঘন, যেখানে বলা হয়েছে কোনো সাজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিক, পেশাগত বা রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিতে পারে না।

এ ছাড়া “স্পষ্ট প্রতারণা” (manifest fraud) সংক্রান্ত একটি ধারা বাতিল করা হয়, কারণ সেখানে প্রতারণামূলক নাগরিকত্ব অর্জন ও তথাকথিত ‘স্পষ্ট প্রতারণা’-র মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণের কোনো সুস্পষ্ট মানদণ্ড ছিল না।

আদালত আরও রায় দেয়, নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতার সময়সীমা পরিবর্তনের বিধানও অসাংবিধানিক, কারণ এতে চলমান আবেদনকারীদের বৈধ প্রত্যাশা (legitimate expectations) লঙ্ঘিত হয়।

এছাড়া, কোনো ব্যক্তি যদি “জাতীয় সম্প্রদায়, এর প্রতিষ্ঠান ও প্রতীকগুলোর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন”—এই অজুহাতে নাগরিকত্ব বাতিলের বিধানকেও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে। আদালতের মতে, কোন ধরনের আচরণে নাগরিকত্ব হারাতে হবে—সে বিষয়ে আইনে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।

সাংবিধানিক আদালতের এই রায়ের ফলে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনীগুলো অনুমোদিত আকারে কার্যকর হতে পারছে না। নতুন করে সংশোধিত পাঠ অনুমোদন, পর্যালোচনা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান নাগরিকত্ব আইনই কার্যকর থাকবে।