ইতিহাসের বৃহত্তম জানাজা: সংসদ ভবন এলাকায় শহীদ শরিফ ওসমান হাদির শেষ বিদায়

Osman Hadi Janaza

কয়েক লাখ মানুষের অংশগ্রহণে রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই বলছেন, এটি স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জানাজা।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ ওসমান হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার বড় ভাই জানাজায় ইমামতি করেন।

জানাজায় অংশ নেওয়া ৬৫ বছর বয়সী ধানমন্ডির বাসিন্দা আমিনুর রহমান বলেন, “আমার জীবনে অনেক জানাজায় অংশ নিয়েছি, কিন্তু এত বড় জানাজা কখনো দেখিনি। শহীদ হাদি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছেন বলেই এত মানুষের ঢল নেমেছে।”

জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য শনিবার সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষের মিছিল মানিক মিয়া অ্যাভিনিউমুখী হতে থাকে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের ঢলে যেন সব পথ এসে মিলিত হয় এক মোহনায়।

দুপুর ১টার মধ্যেই জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার দুটি বড় মাঠ সম্পূর্ণভাবে মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ভিড় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পেরিয়ে ফার্মগেটের খামারবাড়ি ও আসাদগেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। উত্তর দিকে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র এলাকাতেও ছিল জনসমুদ্র।

মিরপুর-২ থেকে আসা আব্দুস সুবহান বলেন, “আমার ৪৫ বছরের জীবনে এত বড় জানাজা দেখিনি। আমার ধারণা, ৭ থেকে ৮ লাখ মানুষ জানাজায় অংশ নিয়েছেন।”

ধানমন্ডির বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, “কত লাখ মানুষ হয়েছে তা বলা কঠিন, তবে জীবনে এত মানুষ একসঙ্গে দেখিনি।”

কলাবাগানের বাসিন্দা সফিক জানান, তার ধারণা জানাজায় ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। জানাজার আগে শহীদ ওসমান হাদির বড় ভাই বক্তব্য দেওয়ার সময় লাখ লাখ মানুষ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে রিকশায় থাকা অবস্থায় মোটরসাইকেলে আসা এক সন্ত্রাসী গুলি করে শহীদ শরিফ ওসমান হাদিকে গুরুতর আহত করে। ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে তিনি গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর থেকে তার মরদেহ দেশে আনা হয়।

ওসমান হাদি ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক। ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে তিনি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ শুরু করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার। তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন।