ইটালির সিসিলি দ্বীপের ভিটোরিয়া এলাকায় দুই বাংলাদেশি অভিবাসীকে অপহরণ করে গুরুতর নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে চার বাংলাদেশি নাগরিককে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এর মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং একজন এখনও পলাতক রয়েছে।
কাতানিয়া পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের নির্দেশে স্থানীয় রাগুসা পুলিশ সদর দপ্তর ২৫, ৩৪, ৩৩ ও ৪৩ বছর বয়সি চার বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে কারাগারে আটক রাখার আদেশ কার্যকর করেছে। মামলাটির সার্বিক তদন্ত পরিচালনা করেছে প্রসিকিউটর কার্যালয়ের অ্যান্টি-মাফিয়া অধিদপ্তর (ডিডিএ)।
বিচারিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের অপরাধী হিসেবে গণ্য না করার নীতি বহাল থাকবে।
তদন্ত অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিসিলির ভিটোরিয়ার একটি গ্রামাঞ্চলে এই ঘটনাটি ঘটে। ডিডিএর তত্ত্বাবধানে রাগুসা ফ্লাইং স্কোয়াডের বিদেশি অপরাধ শাখা তদন্ত পরিচালনা করে। তদন্তে জানা যায়, ‘দেক্রেতো ফ্লুসি’ কর্মসূচির আওতায় নিয়মিতভাবে ইটালিতে আসা দুই বাংলাদেশি যুবককে চাকরি ও চুক্তি সইয়ের আশ্বাস দিয়ে পাচারের ফাঁদে ফেলা হয়।
ইটালিতে পৌঁছানোর পর তাদের ভিটোরিয়ার একটি নির্জন গ্রামীণ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়, যা কার্যত একটি অস্থায়ী কারাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। সেখানে ভুক্তভোগীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়, হাত-পা বেঁধে আলাদা কক্ষে আটকে রাখা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, তাদের শেকল, লোহার রড ও ধাতব পাইপ দিয়ে মারধর করা হয়েছে এবং শ্বাসরোধের চেষ্টাও করা হয়।
তদন্তকারীদের মতে, অভিযুক্তদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে ফোন করে ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণের অর্থ আদায় করা। সংগঠিত অপরাধ চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ভয় দেখিয়ে আতঙ্ক আরও বাড়ানো হয়। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে এই নির্যাতন অব্যাহত ছিল।
অভিযোগে আরও বলা হয়, নির্যাতনের সময় পরিবারের সদস্যদের ফোন করে সরাসরি ভুক্তভোগীদের চিৎকার শোনানো হতো, যাতে দ্রুত অর্থ পাঠাতে বাধ্য করা যায়। প্রায় ২০ হাজার ইউরো মুক্তিপণ দেওয়ার পরই দুজনকে ওই স্থান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
পরে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলেও তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্তকারীরা জানান, এই অপরাধের ধরন লিবিয়ায় অভিবাসী পাচারকারী নেটওয়ার্কগুলোর ব্যবহৃত নির্যাতন পদ্ধতির সঙ্গে মিল রয়েছে।
কাতানিয়ার তদন্ত বিচারকের জারিকৃত আদেশ অনুযায়ী তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পলাতক চতুর্থ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তদন্ত এখনো অব্যাহত রয়েছে।
