পর্তুগালের লিসবনে অধিকার আদায়ের অভিবাসীদের বড় সমাবেশ

Bangladeshi Immigrants rally in Portugal

সহজ অভিবাসন নীতি, ঢাকায় পর্তুগালের দূতাবাস স্থাপনে দাবিতে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে এক বিশাল সমাবেশ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ প্রায় ৫৮টি অভিবাসী সংগঠন অংশগ্রহণ করে। গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) পর্তুগালের জাতীয় সংসদের সামনে স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া এ সমাবেশে অভিবাসীরা তাদের অধিকার আদায়ে আওয়াজ তোলেন।

সমাবেশের শুরুতে সলিডারিটি ইমিগ্র্যান্টের প্রেসিডেন্ট টেমোটিও মাসেডো বলেন, বর্তমান সরকারের নতুন অভিবাসন নীতির কারণে অভিবাসীদের জীবন এখন আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। নতুন নীতির প্রভাবে পর্তুগালে আগত অভিবাসীরা তাদের মর্যাদা হারাচ্ছেন এবং ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তিনি উল্লেখ করেন, নতুন অভিবাসন পরিকল্পনায় মানবপাচার চক্র সুবিধা পাচ্ছে, তাই অচিরেই এই নীতি পরিবর্তন করা প্রয়োজন।

নতুন এই অভিবাসন নীতি পরিবর্তনে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিও বিপাকে পড়েছেন। একজন প্রবাসী বাংলাদেশি মো. সিফাত জানান, তিনি ভ্রমণ ভিসায় পর্তুগালে আসেন সহজ অভিবাসন প্রক্রিয়ার আশায়, কিন্তু আইমার আবেদন জমা দেয়ার সুযোগ পাননি। বর্তমানে পুলিশি অভিযানে গ্রেপ্তারের ভয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছেন। আয়েশা সিদ্দিকী নামে আরেক প্রবাসী নারী জানিয়েছেন, পরিবার নিয়ে তিনি পর্তুগালে এসেছেন। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে অভিবাসন অধিদপ্তরের নিকট আবেদন (আইমা এন্ট্রি) করতে পারেননি। বর্তমানে পুলিশি অভিযানে গ্রেপ্তারের ভয় এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। সমাবেশে বাংলাদেশের অভিবাসীরা “We want Portugal Embassy in Bangladesh” ব্যানারে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং বাংলাদেশে পর্তুগালে দূতাবাস স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, বর্তমানে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের পর্তুগালে আনার প্রক্রিয়ায় প্রচুর অসুবিধা পোহাতে হয়। স্থানীয় বাংলাদেশি অভিবাসী মুনায়েম আহমেদ বলেন, “আমাদেরকে ভারতে যেতে হয় এসব কাজের জন্য। বাংলাদেশেই দূতাবাস থাকলে এটি সহজ হতো।” বর্তমানে পর্তুগালে প্রায় ৫০,০০০ বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করছেন।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী এক অভিবাসী নেত্রী বলেন, “অভিবাসীরা মানুষ। আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি, বসে থাকতে নয়। আমাদের পরিবার দেশে পড়ে আছে।”

এছাড়াও মাসেডো অভিযোগ করেন যে, বর্তমান অভিবাসন অধিদপ্তর আইমা কেবল স্বল্পমেয়াদী সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে, যা স্থায়ীভাবে অবস্থানরত অভিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনকে সংকটে ফেলেছে। বিশেষত, মেয়াদ উত্তীর্ণ রেসিডেন্ট কার্ড নবায়নের সময় দীর্ঘায়িত হওয়ায় অভিবাসীদের নানাবিধ অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি অভিবাসীও এই নতুন অভিবাসন নীতির কারণে সংকটে পড়েছেন।

চলতি বছরের ৩ জুন সহজ শর্তে নিয়মিত অভিবাসন নীতি বাতিল করে আইন ৮৮ এবং ৮৯ স্থগিত করার পর থেকে অভিবাসীদের জন্য কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার। এই কঠোর নীতিকে অভিবাসীরা অমানবিক এবং বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করেছেন।

অভিবাসীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ১৩ জুনের পর থেকে তারা সরকারের কঠোর নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের দাবিসমূহ নিয়ে আলোচনাও করেছেন। সব বামপন্থী দলগুলোও তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। সমাবেশের শেষে ঘোষণা দেওয়া হয়, আগামী ৯ নভেম্বর লিসবন এবং পোর্তোতে আরেকটি বড় সমাবেশের আয়োজন করা হবে।