প্রবাসী বাংলাদেশীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে চলা আন্তর্জাতিক সামাজিক সংগঠন কানেক্ট বাংলাদেশ ২৬ ও ২৭ অক্টোবর পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে সফলভাবে ৬ষ্ঠ বার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন করেছে। এই দুই দিনের সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী নেতৃবৃন্দ ও কানেক্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা অংশ নেন এবং প্রবাসীদের নানাবিধ অধিকার ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। প্রবাসীদের জন্য অধিক সুবিধা, অধিকার রক্ষা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই সংগঠনটি নিরলসভাবে কাজ করে আসছে, যা এই সম্মেলনের বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে আরো সুসংগঠিত ও পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
প্রথম অধিবেশনটি ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কানেক্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কামরুল ইসলাম, এবং সঞ্চালনায় ছিলেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জাফর আজাদী ও বাবুল তালুকদার। এই অধিবেশনে কানেক্ট বাংলাদেশের পর্তুগাল শাখার সদস্যদের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দ প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যার দিকগুলো উপস্থাপন করেন এবং এর সমাধানের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
দ্বিতীয় অধিবেশনটি ২৭ অক্টোবর সকালে লিসবনের অভিজাত পাঁচ তারকা হোটেল মুনদিয়ালের হল রুমে অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আফসার হোসেন নিলু এবং পরিচালনা করেন হাবিবুর রহমান। অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কমিউনিটি নেতা জনাব রানা তাসলিম উদ্দীন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুহিন আহমদ চৌধুরী, যিনি অনুষ্ঠানের সূচনা করেন পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি প্রবাসীদের জন্য কানেক্ট বাংলাদেশের নিরলস প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
কানেক্ট বাংলাদেশের চূড়ান্ত অধিবেশনটি ২৭ অক্টোবর বিকেলে একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মনসুর চৌধুরী এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সম্মেলনের সমন্বয়ক ইমদাদুর রহমান স্বপন। এই অধিবেশনে কানেক্ট বাংলাদেশের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। প্রবাসীদের সামগ্রিক উন্নয়ন ও তাদের অধিকার রক্ষায় নতুন কর্মপন্থা এবং কর্মসূচী গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিআরসিপির সভাপতি আবু মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ নাঈম, কানেক্ট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আফসার হোসাইন নিলু (আয়ারল্যান্ড), জাফর আজাদী (ফ্রান্স), বাবুল মিয়া তালুকদার (যুক্তরাজ্য), কামরুল ইসলাম (যুক্তরাজ্য), এবং পর্তুগালের তরুণ রাজনীতিবিদ আজমল আহমদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি নেতা মো. মুক্তার চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাকিম মিনহাজ, এম কে নাসির, রাজিব আল হাসান মোহন, জাবেদ হক, মোহাম্মদ আমিরুল হক, রুবেল আহমদ, আলমাস উদ্দীন চঞ্চল, সুজন ভুইয়া, তোফায়েল আহমেদ, মাসুম খান, ইমরান আহমদ ইমু, এস এম জুয়েল, তোফায়েল হামিদ চৌধুরী, শাকিব আহমদ, মর্তুজ আলী, কারি সায়েম আহমদ, ইঞ্জিনিয়ার নিরব, সুজন মিয়া, আলাউদ্দিন ভুইয়া, রেজাউল করিম, জিয়া উদ্দীন, সাগর আহমদ, লুৎফুর রহমান প্রমুখ।
সম্মেলনে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা পরিষদ এবং ৪২ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরিকল্পনা পরিষদে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বাবুল তালুকদার (ইংল্যান্ড), এডভোকেট কামরুজ্জামান (ইটালি), হাবিবুর রহমান (ফ্রান্স), কামরুল ইসলাম (পর্তুগাল), মামুনুর রশীদ (স্পেন), মাসুক মিয়া মামুন (ফ্রান্স)। এছাড়া নতুন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ইমদাদুর রহমান স্বপন (পর্তুগাল), হাবিবুর রহমান (পর্তুগাল), মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ (পর্তুগাল), আরজেল হোসেন (স্পেন), মোহাম্মদ মিনহাজ (সৌদি আরব), এডভোকেট রোকসানা আক্তার (ইটালি) এবং রাজু আহমদ খান (ঢাকা, বাংলাদেশ)।
সম্মেলনে কানেক্ট বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ প্রবাসীদের কল্যাণে ৮ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচীগুলো আগামী দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে প্রবাসীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন, অধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ, প্রবাসীদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য বিশেষ কার্যক্রম, এবং প্রবাসী শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করা। পরিকল্পনা পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমিটির সদস্যদের মধ্যে এই কর্মসূচীগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্ব বণ্টন করা হয়।
কানেক্ট বাংলাদেশের এই সম্মেলনটি প্রবাসী বাংলাদেশী সমাজের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সম্মেলনের মাধ্যমে প্রবাসীদের প্রতি নিবেদিত এই সংগঠনটি তাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য এবং কার্যক্রম নিয়ে আরো শক্তিশালী ভূমিকা পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। প্রবাসী বাংলাদেশী সমাজের উন্নয়নে কানেক্ট বাংলাদেশের এই সম্মিলিত উদ্যোগ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।