পাকিস্তানে ভারতের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত সামরিক উত্তেজনার কারণে এশিয়ার বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা আজ বুধবার ইউরোপগামী ও ইউরোপফেরত ফ্লাইট বাতিল বা রুট পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। তাইওয়ানের চায়না এয়ারলাইনস, কোরিয়ান এয়ার, থাই এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসসহ বেশ কিছু এয়ারলাইন্স এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কাশ্মীরে ইসলামপন্থী জঙ্গিদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালায়। এর জবাবে পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এতে পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং ভারত-পাকিস্তানের একাধিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর ফলে ইউরোপগামী ফ্লাইটগুলোকে পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে বিকল্প রুট গ্রহণ করতে হচ্ছে। কোরিয়ান এয়ার জানিয়েছে, তারা সিউল-ইনচন থেকে দুবাইগামী ফ্লাইট এখন মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও ভারতের ওপর দিয়ে চালাচ্ছে। থাই এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, আজ ভোর থেকে তাদের ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়াগামী ফ্লাইট নতুন রুটে চলাচল করছে।
চায়না এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লন্ডন, ফ্রাঙ্কফুর্ট, রোমসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে চলাচলকারী ফ্লাইট ব্যাহত হয়েছে। ভারতের দিল্লি থেকে ফ্রাঙ্কফুর্টগামী লুফথানসা ফ্লাইট এলএইচ৭৬১ গন্তব্যে পৌঁছাতে স্বাভাবিকের তুলনায় আধা ঘণ্টা বেশি সময় নিয়েছে।
ইউরোপগামী রুটে অতিরিক্ত বিমান চলাচলের কারণে ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও কুয়েতের আকাশপথে বিমানগুলোর দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে বলে ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইটগুলো জানিয়েছে। এর ফলে আকাশপথে ব্যাপক চাপ ও দেরির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “ভারতের এই আক্রমণ উপসাগরীয় দেশগুলোর বাণিজ্যিক ফ্লাইটের জন্য গভীর ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং নিরীহ মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে।” ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি।
এদিকে, ভারতের শীর্ষস্থানীয় বিমান সংস্থা ইন্ডিগো আজ সকাল পর্যন্ত ১৬৫টি ফ্লাইট বাতিল করেছে বলে জানিয়েছে। এতে কোম্পানির শেয়ারের দাম ১.১ শতাংশ কমে গেছে। এয়ার ইন্ডিয়া, স্পাইসজেট এবং আকাসা এয়ারের ফ্লাইটেও ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছে।
ডাচ বিমান সংস্থা কেএলএম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করবে না। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসও ৬ মে থেকে ওই অঞ্চলের ওপর দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রেখেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল নজরদারি সংস্থা ফ্লাইটরাডার২৪ জানিয়েছে, পাকিস্তান ও ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশসীমায় বেসামরিক ফ্লাইট কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এশিয়া প্যাসিফিক এয়ারলাইনস অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে বলেছে, যুদ্ধ ও সংঘাতপূর্ণ আকাশপথে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে শুধু আর্থিক ক্ষতির নয়, বরং নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকিও বাড়ছে। তারা বিশেষভাবে ‘জিপিএস স্পুফিং’-এর সম্ভাবনা নিয়ে সতর্ক করেছে, যা বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য অন্যতম বড় হুমকি।
পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ চলাচলে এই বিশৃঙ্খলা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।