বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির নেতাকর্মীদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ ও সম্মেলন আয়োজনসহ সবধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে যা আছে
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর্যন্ত দলটি ও তাদের অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য ও ভিন্নমতের মানুষের ওপর হামলা, গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণসহ সন্ত্রাসী ও নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তারা দেশে একপ্রকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া, গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলা ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুম, খুন, পুড়িয়ে হত্যা, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী তৎপরতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের সুস্পষ্ট অভিযোগ দলটির বিরুদ্ধে রয়েছে। এসব অভিযোগ দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এ সকল অভিযোগের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ ও তার বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের বিভিন্ন ফৌজদারি আদালতে অসংখ্য মামলা বিচারাধীন রয়েছে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এসব মামলার বিচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো, রাষ্ট্রের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে তারা বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত রয়েছে।
উল্লেখ করা হয়, তারা গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের ওপর হামলা, উসকানিমূলক মিছিল, রাষ্ট্রবিরোধী লিফলেট বিতরণ, বিদেশে পলাতক নেত্রীর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধমূলক বক্তব্য প্রচার, ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের চেষ্টাসহ একাধিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। এর ফলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে এবং বিচারপ্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরকারের কাছে থাকা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো আচরণ করছে এবং রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার লক্ষ্যে বেআইনি ষড়যন্ত্র ও কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে।
এই সব বিবেচনায় সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ধারা ১৮ (১) অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সমীচীন মনে করে সরকার।