স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশ: স্বপ্নপূরণের পথে নতুন অঙ্গীকার

PortuBangla Independence Day 2025

পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার শৃঙ্খল ভেঙে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে স্বাধীন স্বদেশ বিনির্মাণের ৫৪তম বার্ষিকীতে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণ অতীতকে স্মরণ করে এবং নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়নের সংকল্প নিয়ে দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস।

চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পথ ধরে তরুণ প্রজন্ম এখন বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। বুধবার স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে সেই অঙ্গীকারের পুনর্ব্যক্ত হচ্ছে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে। শহর থেকে গ্রাম, সারাদেশ লাল-সবুজের উৎসবমুখর সাজে সেজেছে, শহীদদের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বৈষম্য ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরো এগিয়ে নিয়ে যাই, বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াক এক নতুন বাংলাদেশ—মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।”

তিনি দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার শুভেচ্ছা বার্তায় বলেন, “স্বাধীনতা অর্জন ছিল আমাদের আত্মমর্যাদা, অস্তিত্ব রক্ষা এবং অধিকার আদায়ের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের চূড়ান্ত ধাপ। যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ায়, তার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল আজকের এই দিনে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।”

বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “গত ১৬ বছর দেশের মানুষ এই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেনি। স্বৈরাচারী শাসক জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের ঘাড়ে চেপে বসে তাদের স্বাধীনতা ও মৌলিক সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থান দেশের মানুষকে স্বৈরাচারের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

এদিকে, গত জুলাই-অগাস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাকর্মীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার ‘স্বৈরশাসন’ পেরিয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে ইউনূস সরকার।

স্বাধীনতার আনন্দে দেশব্যাপী উদযাপন

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনটি শুরু হয়, এরপর বর্ণাঢ্য র‍্যালি, আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করা হচ্ছে।

তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে নতুন দিনের স্বপ্ন—একটি সমৃদ্ধ, বৈষম্যহীন ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়।