২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের বাজেট ইতিহাসে এবারই প্রথমবার আগের বছরের তুলনায় বাজেটের আকার হ্রাস পেল। এই বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোয় ব্যতিক্রমী এক দৃষ্টান্ত। সোমবার (২ জুন) টেলিভিশন ভাষণের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম বাজেট বক্তব্যে তিনি এই প্রস্তাব তুলে ধরেন।
ঘাটতি ও অর্থায়ন পরিকল্পনা
অনুদান ব্যতীত বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। অনুদানসহ মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩৯ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯৬ হাজার কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি এবং ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ২১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
রাজস্ব ও ব্যয় কাঠামো
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্য ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা, এনবিআর বহির্ভূত কর ১৯ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
চলতি ব্যয় বা পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮৩ কোটি এবং ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এ ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ১ লাখ কোটি ও বৈদেশিক ঋণের সুদ ২২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
উন্নয়ন বাজেট ও প্রকল্প ব্যয়
প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, এডিপি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে ৭ হাজার ৭৫১ কোটি, এবং স্কিম ব্যয়ে ৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। “কাজের বিনিময়ে খাদ্য” ও স্থানান্তরমূলক ব্যয়ে ২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টার বার্তা
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সম্পদের সুষম বণ্টন ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই এই বাজেটের মূল লক্ষ্য।” তিনি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুরক্ষা জোরদারে গুরুত্ব দিয়েছেন।
এ বাজেট প্রস্তাবের পর সংসদীয় আলোচনা শেষে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে দেশের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অর্থনৈতিক রূপরেখা।