ইউরোপজুড়ে অভিবাসন বিরোধী রাজনীতি তীব্র

europe anti immigration right wing politics

ইউরোপজুড়ে অভিবাসনবিরোধী মনোভাব দিন দিন আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ একাধিক ইউরোপীয় দেশে অভিবাসন ইস্যু এখন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। গত বছর থেকে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরে ‘ওদের দেশে ফেরত পাঠাও!’ স্লোগান দিয়ে মিছিল ও সমাবেশের ঘটনা ব্যাপক নজর কাড়ে।

যুক্তরাজ্যের এক আইনপ্রণেতা সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, টেলিভিশন ও গণমাধ্যমে এখন অতিরিক্ত অশ্বেতাঙ্গ মুখ দেখা যাচ্ছে। একইসঙ্গে দেশটির রাজনৈতিক উচ্চপর্যায়ের একাধিক ব্যক্তি অভিবাসীদের দেশছাড়া করার পক্ষে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন। এসব বক্তব্য সমাজে বিভাজন ও উত্তেজনা বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অভিবাসনকে কেন্দ্র করে ইউরোপজুড়ে ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যুক্তরাজ্যের রিফর্ম ইউকে, জার্মানির অলায়েন্স ফর জার্মানি এবং ফ্রান্সের ন্যাশনাল র‍্যালি—এই দলগুলো অভিবাসনকে জাতীয় পরিচয়ের জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরে জনমত জরিপে শীর্ষে বা শীর্ষের কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই বিভাজনকে আরও উসকে দিচ্ছে। বিশেষ করে এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে অ্যালগরিদম বিভাজনমূলক ও বিদ্বেষপূর্ণ কনটেন্টকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। প্ল্যাটফর্মটির মালিক ইলন মাস্কের কট্টর ডানপন্থী পোস্টে সমর্থনসূচক রিটুইটও ইউরোপীয় রাজনীতিতে চরম মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়ার গতি বাড়িয়েছে।

ডানপন্থী দলগুলো ক্রমেই জাতিগত জাতীয়তাবাদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। জার্মানির অলায়েন্স ফর জার্মানি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল র‍্যালি ও হাঙ্গেরির ফিদেজ পার্টি অভিবাসনবিরোধী কঠোর ভাষ্য প্রচার করছে। এসব দলের প্রতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থনও তাদের রাজনৈতিক শক্তি বাড়িয়েছে।

একসময় যেসব নীতি চরমপন্থী হিসেবে বিবেচিত হতো, সেগুলো এখন মূলধারার রাজনৈতিক এজেন্ডায় স্থান পাচ্ছে। জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা রিফর্ম ইউকে ঘোষণা দিয়েছে, ক্ষমতায় এলে তারা অভিবাসীদের স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা বাতিল করবে, এমনকি দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও।

এদিকে বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি জানিয়েছে, দ্বৈত নাগরিকত্বধারী ব্রিটিশ নাগরিকরা কোনো অপরাধে দোষী প্রমাণিত হলে তাদের দেশছাড়া করা হবে। ফলে ইউরোপজুড়ে বর্ণবাদী মনোভাব ও বৈষম্যমূলক নীতিগুলো রাজনৈতিক আলোচনায় আরও দৃঢ়ভাবে জায়গা করে নিচ্ছে।

এই পরিস্থিতি ইউরোপীয় সমাজের সামাজিক সহনশীলতা ও বহুত্ববাদী সংস্কৃতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, দ্রুত ও কার্যকর রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্যোগ না নিলে এই বিভাজন আরও গভীর হতে পারে।

ডানপন্থী দলের প্রভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অভিবাসী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করে নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে ইউরোপে অভিবাসন নীতি ও সামাজিক সংহতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্বশীল ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।