ইউরোপে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ, উগ্র ডানপন্থীদের উল্লাস

EU migration crackdown

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা আরোপ করছে, বিশেষ করে বহিষ্কারের ক্ষেত্রে। এই নতুন পরিকল্পনা উগ্র ডানপন্থীদের খুশি করলেও, এটি তাদের বর্ণনাকে আরও উসকে দিতে পারে।

ইউরোপীয় কমিশন অভিবাসন নিয়ন্ত্রণকে আরও কার্যকর করতে বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মঙ্গলবার কমিশনের অভিবাসন বিষয়ক কমিশনার ম্যাগনাস ব্রুন্নার এবং নির্বাহী সহ-সভাপতি হেনা ভিরকুনেন একটি নতুন পরিকল্পনা উন্মোচন করেছেন, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে যাদের ইইউ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের কার্যকরভাবে বহিষ্কার করা।

২০২৩ সালে ৪,৮০০০০-এর বেশি মানুষকে ইইউ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও মাত্র ২০ শতাংশ কার্যকরভাবে প্রস্থান করেছে। এই ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার জন্য কমিশন কঠোর বহিষ্কার নীতি গ্রহণ করছে, যাতে প্রত্যাখ্যাত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যায় এবং ইউরোপের বাইরে “রিটার্ন হাব” স্থাপন করা যায়।

এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলা করা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উগ্র ডানপন্থীদের উত্থান রোধ করতে কেন্দ্রীয় ডানপন্থী দলগুলো কঠোর অভিবাসন নীতি গ্রহণ করছে। ভিরকুনেন বলেন, “আমাদের নাগরিকরা চান আমরা অভিবাসন কার্যকরভাবে পরিচালনা করি। যদি অবৈধভাবে থাকা ব্যক্তিরা থেকে যায়, তাহলে আমাদের অভিবাসন নীতির বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়।”

বিশেষত জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস এবং সুইডেনে অভিবাসন বিরোধী মনোভাব বাড়ছে, যা উগ্র ডানপন্থী দলগুলোর শক্তি বৃদ্ধি করছে। এ কারণে ইউরোপীয় পিপলস পার্টি (EPP) নেতৃত্বাধীন ইউরোপের কেন্দ্র-ডান শিবির দেখাতে চায় যে, মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

ব্রুন্নার স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, ইইউ-এর বিদ্যমান বহিষ্কার নীতির ব্যর্থতা মেনে নেওয়া যাবে না। তাই নতুন পরিকল্পনায় ইউরোপীয় রিটার্ন অর্ডার চালু করা হয়েছে, যা ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রে বাধ্যতামূলক হবে। এর ফলে, বহিষ্কৃত ব্যক্তিরা অন্য দেশে গিয়ে পুনরায় আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে পারবে না।

এছাড়া, নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে নতুন পরিকল্পনায় আটক রাখার ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। যাদেরকে নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হবে, তাদের ওপর ইউরোপজুড়ে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।

এই পরিকল্পনার সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ হচ্ছে রিটার্ন হাব। এটি ইউরোপের বাইরের দেশগুলিতে স্থাপন করা হবে, যেখানে বহিষ্কারের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের রাখা হবে। তবে কমিশন জোর দিয়ে বলছে যে, এটি ব্রিটেনের বাতিল হওয়া রুয়ান্ডা পরিকল্পনার মতো হবে না।

ব্রুন্নার বলেন, “আমরা অবকাঠামো তৈরি করব না, বরং সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে এই ব্যবস্থা গ্রহণের ন্যূনতম শর্ত নির্ধারণ করে দেব।” তবে এটি বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদন প্রয়োজন, যেখানে রাজনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট। ইউরোপীয় পিপলস পার্টি (EPP) আশা করছে, তারা মধ্যপন্থী দলগুলোকে পাশে পাবে। তবে সোশ্যালিস্ট ও ডেমোক্র্যাট (S&D) এবং রিনিউ ইউরোপ (Renew Europe) দলগুলো এই প্রস্তাবের কিছু অংশের বিরোধিতা করছে।

বিশেষ করে ‘রিটার্ন হাব’ নিয়ে বিতর্ক তীব্র। রিনিউ ইউরোপ প্রধান ভ্যালেরি হেয়ার বলেন, “এটি অভিবাসন সমস্যার যথাযথ সমাধান নয়, বরং একটি জনপ্রিয়তাবাদী পদক্ষেপ যা আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”

ডানপন্থী দলগুলো আশা করছে যে, EPP উগ্র ডানপন্থীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই বিল পাস করাবে, যেমনটি তারা জুনের ইইউ নির্বাচনের পর থেকে করছে। ইতালির “রিটার্ন হাব” মডেলকে অনুকরণ করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়েছেন ইউরোপীয় কনজারভেটিভ ও রিফর্মিস্ট (ECR) দলের নেতা নিকোলা প্রকাচিনি।

তবে ব্রুন্নার আশাবাদী যে, পার্লামেন্টের মধ্যপন্থী দলগুলো এই প্রস্তাবের পক্ষে আসবে। তিনি বলেন, “এটি রাজনৈতিক রঙের বিষয় নয়, বরং বাস্তব সমস্যার সমাধানের জন্য নেওয়া পদক্ষেপ।”

ইউরোপে অভিবাসন ইস্যুতে নতুন কঠোর নীতির মাধ্যমে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো উগ্র ডানপন্থীদের চাপে পড়েছে। যদিও নতুন পরিকল্পনাটি কঠোর অভিবাসন ব্যবস্থাপনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তবে এটি কতটা কার্যকর হবে এবং রাজনৈতিকভাবে কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনও অনিশ্চিত। ইইউ পার্লামেন্টে কঠিন আলোচনা ও বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা অভিবাসন নীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।