নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট আজ সোমবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার থেকে একযোগে সম্প্রচারিত prerecorded বাজেট বক্তৃতায় তিনি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করবেন।
দেশের ইতিহাসে এটি ৫৪তম জাতীয় বাজেট। এবারের বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা—এই চারটি লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটের তুলনায় এবারের বাজেটের আকার প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাজেটের কাঠামোতে বাস্তবায়নযোগ্যতা ও সংযমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাজেটের মূল কাঠামো:
- রাজস্ব বাজেট: ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা (বৃদ্ধি: ২৮ হাজার কোটি টাকা)
- উন্নয়ন বাজেট (এডিপি): ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা (হ্রাস: ৩৫ হাজার কোটি টাকা)
- বাজেট ঘাটতি: ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ৩.৯৫ শতাংশ)
অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা:
- জিডিপি প্রবৃদ্ধি: ৫.৫ শতাংশ
- মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্যমাত্রা: ৬.৫ শতাংশ
- রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা: ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন জানিয়েছেন, “এই বাজেট হবে ব্যবসাবান্ধব ও টেকসই প্রবৃদ্ধিমুখী। বিনিয়োগ, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যকর করনীতি গ্রহণ করা হবে।”
গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ:
- সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো
- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে বরাদ্দ
- কৃষি, সার ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি অব্যাহত
- কর পরিপালন ঘাটতি কমানো ও ভ্যাট ব্যবস্থা সহজীকরণ
- উন্নয়ন বাজেটে নতুন মেগা প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত না করে চলমান মাতারবাড়ি প্রকল্পে গুরুত্ব
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাজেটে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কঠোরতা থাকবে এবং জনসন্তুষ্টিমূলক কিন্তু ভবিষ্যৎ বোঝা সৃষ্টিকারী কোনো ব্যয়কে স্থান দেওয়া হবে না।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে শুধু বেতন-ভাতায় বরাদ্দ হতে পারে ৮২ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকি ব্যয় দাঁড়াবে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা এবং সুদ পরিশোধে বরাদ্দ হবে রাজস্ব বাজেটের ২২ শতাংশের বেশি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বাজেট অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি নীতিগত ভারসাম্যের পরীক্ষা। সংকটাপন্ন অর্থনীতি ও রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে একটি স্থিতিশীল ও বিশ্বাসযোগ্য আর্থিক রূপরেখা উপস্থাপন করাই হবে সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ।