সৌদি আরবের মক্কায় আজ পালিত হচ্ছে পবিত্র হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন—আরাফার দিন। ফজরের নামাজের পর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো হাজি মিনার তাঁবু শহর ছেড়ে রওনা হয়েছেন আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে। আরাফাতে অবস্থান হজের তিনটি ফরজের মধ্যে অন্যতম এবং এটিকেই বলা হয় হজের মূল পর্ব।
আরাফাতে পৌঁছেই হাজিরা মুখে মুখে উচ্চারণ করছেন তাক্বওয়ার মহিমান্বিত ঘোষণা: আরাফাতের ময়দান মুখর হয়ে উঠেছে- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।
আরাফাতের ময়দান মক্কা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এটি দৈর্ঘ্যে দুই কিলোমিটার, প্রস্থেও দুই কিলোমিটার। এ ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এখানকার মসজিদে নামিরা থেকে বিখ্যাত বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এ ময়দানে উপস্থিত হজযাত্রীদের উদ্দেশে খুতবা দেওয়া সুন্নত।
সারা দিন হাজিরা এখানে জোহর ও আসরের নামাজ একত্রে আদায় করবেন, শুনবেন খুতবা এবং ডুবে থাকবেন ইবাদত, দোয়া ও আল্লাহর জিকিরে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “আরাফাতে অবস্থানই হজ” (মুসনাদে আহমাদ)। এমনকি যারা অসুস্থ ও হাসপাতালে রয়েছেন, তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে কিছু সময়ের জন্য আরাফাতে নেওয়া হবে।
এবছর আরাফার খুতবা প্রদান করবেন শায়েখ সালেহ বিন হুমাইদ—সৌদি শুরা কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান ও মসজিদুল হারামের প্রবীণ ইমাম। খুতবা বিশ্বের ৩৪টি ভাষায় সম্প্রচারিত হবে, যার মধ্যে বাংলাও রয়েছে। বাংলা অনুবাদে দায়িত্ব পালন করছেন মুহাম্মদ খলিলুর রহমান মাক্কি।
হজযাত্রীদের আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সৌদি কর্তৃপক্ষ আরাফাতে নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
- বসানো হয়েছে ১০০টি সৌরচালিত কুলিং ইউনিট
- ৬০ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে অস্থায়ী তাঁবু
- আছে ৫০০ জন চিকিৎসকসহ মেডিকেল ক্যাম্প
- সরবরাহ করা হচ্ছে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট
- এবং জরুরি প্রয়োজনে ৯১১ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে
আজ সূর্যাস্তের পর হাজিরা যাবেন মুজদালিফায়। সেখানে রাত কাটিয়ে, ১০ জিলহজ সকালে মিনায় ফিরে তারা তিন জামারায় পাথর নিক্ষেপ করবেন, ঈদের কোরবানি দেবেন, মাথা মুন্ডন করবেন এবং শেষে তাওয়াফে জিয়ারত ও বিদায় তাওয়াফের মাধ্যমে পবিত্র হজ সম্পন্ন করবেন।