ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের পশ্চিম সীমান্তজুড়ে একাধিক ড্রোন ও অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করে “বিস্তৃত হামলা” চালিয়েছে। পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
জানা গেছে, বুধবার ভারত পাকিস্তানের ভেতরে একাধিক স্থানে “সন্ত্রাসী ঘাঁটি” লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এই হামলা ছিল জম্মু-কাশ্মীরে গত মাসে হওয়া প্রাণঘাতী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে, যার জন্য ভারত ইসলামাবাদকে দায়ী করেছে।
পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও, সীমান্তে গুলি বিনিময়, মর্টার শেল বর্ষণ, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানি সেনারা বহুবার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে। তবে ড্রোন হামলা সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে এবং যথাযথ জবাবও দেওয়া হয়েছে।” তারা আরও জানিয়েছে, “সব ধরনের অপচেষ্টা শক্তির মাধ্যমে প্রতিহত করা হবে।”
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনও ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিবৃতির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। এর আগে ইসলামাবাদ পাঞ্জাবের পাঠানকোট, কাশ্মীরের শ্রীনগর এবং রাজস্থানের জয়সলমিরে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, এগুলি “ভিত্তিহীন” ও “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত”।
কাশ্মীরের সাম্বা অঞ্চলে বৃহস্পতিবার রাতে একটি বড় অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী (BSF)। পাশাপাশি, উরির কিছু অংশে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ভারী গোলাবর্ষণ চলতে থাকে। এতে বেশ কিছু ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে যায় এবং একজন মহিলা নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছেন বলে নিরাপত্তা সূত্রে জানানো হয়েছে।
আমৃতসর শহরে সাইরেন বাজানো হয় টানা দুই ঘণ্টা ধরে এবং বাসিন্দাদের ঘরের ভিতরে থাকতে বলা হয়। শহরটিতে অবস্থিত সোনার মন্দির শিখ সম্প্রদায়ের একটি পবিত্র স্থান হওয়ায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
শের-ই-কাশ্মীর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জানান, “রাত ৪টার দিকে বিস্ফোরণের শব্দ ছিল ভয়াবহ। জানালার কাঁচ কেঁপে উঠেছিল, মনে হচ্ছিল ভেঙে যাবে। পরবর্তীতে আকাশ ধোঁয়াটে হয়ে যায়।”
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে চীন পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্বশক্তি দুই দেশের প্রতি উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, “আমরা চাই এই পরিস্থিতি যত দ্রুত সম্ভব শান্ত হোক। তবে আমরা এই দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণে নেই।”
স্বাধীনতার পর ১৯৪৭ সাল থেকে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক উত্তপ্ত। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর অঞ্চল নিয়ে ইতিমধ্যে তিনবারের মধ্যে দুইবারই যুদ্ধ করেছে দেশ দুটি।