নাগরিকত্ব লাভের শর্ত সহজ করা এবং বিদেশি কর্মী নিয়োগে উদার নীতি গ্রহণে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু হয়েছে ইতালির বহুল আলোচিত গণভোট। দুই দিনব্যাপী এ গণভোট আয়োজন করেছে বাম ও মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং ইতালির শীর্ষ শ্রমিক ইউনিয়ন CGIL।
গণভোটের মাধ্যমে সরকারকে নাগরিকত্ব ও শ্রমনীতি সংস্কারে বাধ্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে আয়োজকরা। ব্যালট পেপারে মোট পাঁচটি প্রশ্ন থাকছে, যার মধ্যে চারটি শ্রমবাজার সংক্রান্ত এবং একটি নাগরিকত্ব নিয়ে।
তবে ভোটের সফলতা নিয়ে রয়েছে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা। ইতালির আইন অনুযায়ী, গণভোট কার্যকর করতে প্রয়োজন মোট ভোটারের কমপক্ষে ৫০ শতাংশের অংশগ্রহণ। জনমত জরিপ বলছে, ভোটার উপস্থিতি ৩১ থেকে ৩৯ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে, যা কোরাম পূরণে যথেষ্ট নয়।
শ্রমিক ইউনিয়ন CGIL জানিয়েছে, তারা গণভোটের জন্য ৪৫ লাখ ইতালীয় নাগরিকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে, যা প্রয়োজনীয় সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। ইউনিয়নের প্রধান মাউরিৎসিও লান্দিনির সঙ্গে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (PD) নেত্রী এলি শ্লাইন। তিনি অভিযোগ করেন, “প্রধানমন্ত্রী মেলোনি গণভোটে ভোট না দিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন, কারণ তিনি জানেন অনেক নাগরিকই সরকারের কঠোর নীতির বিরোধিতা করছেন।”
বর্তমান ডানপন্থি সরকারের নেতৃত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি ও তার জোটের শীর্ষ নেতারা ভোটে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও মেলোনি নিজে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেন, তবে ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন।
নাগরিকত্ব বিষয়ক প্রশ্নে নাগরিকদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, ইতালিতে নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবশ্যক বসবাসের সময়সীমা ১০ বছর থেকে কমিয়ে ৫ বছর করা উচিত কি না। আয়োজকদের দাবি, এই সময়সীমা বাড়ানোর ফলে অন্তত ২৫ লাখ বিদেশি নাগরিক নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
ইতালির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, আর প্রবীণ জনসংখ্যার কারণে শ্রমবাজারে তৈরি হয়েছে শূন্যতা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশি কর্মীদের প্রতি ইতালিকে আরও আকর্ষণীয় করতে না পারলে অর্থনীতি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
একজন বিদেশি নির্মাণ শ্রমিক, মোহাম্মদ কামারা বলেন, “১০ বছরের তুলনায় ৫ বছর অপেক্ষা অনেক বেশি সহনীয়। এটি আমাদের জীবনে স্থিতিশীলতা আনতে পারে।”
রাজনৈতিক ঝুঁকি বিশ্লেষক ফ্রান্সেস্কো গালিয়েত্তি বলেন, “সরকার যখন সংস্কৃতি ও পেনশন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, তখন বাস্তবতা হলো, উৎপাদনমুখী অর্থনীতি চালাতে অভিবাসী কর্মীদের বিকল্প নেই।”
গণভোটে শ্রমবাজার বিষয়ক প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে বরখাস্ত ও ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের ক্ষতিপূরণ বাড়ানো এবং এক দশক আগের একটি শ্রমনীতি বাতিলের প্রস্তাব।
সরকারি জোটের শরিক দল ফোরজা ইতালিয়ার নেতা আন্তোনিও তাজানি ও লিগ দলের মাত্তেও সালভিনিও এই গণভোটে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন।
জরিপ বিশ্লেষক লরেঞ্জো প্রেগলিয়াস্কো মন্তব্য করেন, “বিরোধীদের মূল লক্ষ্য গণভোটকে কার্যকর করার চেয়েও বেশি, সরকারের বিরুদ্ধে জনসমর্থনের শক্তি প্রদর্শন।”
রোববার (৮ জুন) ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে যা সোমবার ৯ জুন পর্যন্ত চলবে। , তবে ইতালির ভবিষ্যৎ অভিবাসন ও শ্রমনীতির চিত্র অনেকাংশেই নির্ভর করছে এই ভোটের ফলাফল এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর।