বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন মাইলফলক রচনা করলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটি প্রথমবারের মতো রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করেছে বিশাল জাতীয় সমাবেশ। ‘জাতীয় সমাবেশ ২০২৫’ শীর্ষক এ আয়োজন ঘিরে শনিবার সকাল থেকেই ঢাকামুখী মিছিল ও স্লোগানে উদ্যান পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
সমাবেশের মূল কার্যক্রম শুরু হয় দুপুর ২টায়, তবে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সাইফুল্লাহ মানসুরের সঞ্চালনায় সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় জমে ওঠে প্রথম পর্ব। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত সাংস্কৃতিক দলগুলো অংশ নেয় কর্মসূচিতে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে চলে সমাবেশের প্রস্তুতি গত রাত থেকেই। মঞ্চ, অতিথিদের আসন, ৩৩টি এলইডি স্ক্রিন, ৩০০টি মাইক, ভ্রাম্যমাণ টয়লেট, মেডিকেল বুথ, নামাজের স্থানসহ যাবতীয় লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা মধ্যরাতেই সম্পন্ন হয়। সারা উদ্যানে ছড়িয়ে থাকে দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’। অতিথি ও শহীদ পরিবারদের জন্য লাল কার্পেট ও অস্থায়ী ছাউনিতে সাজানো হয় আলাদা আসন।
সারাদেশ থেকে লাখো নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে রাজধানীতে আসেন। শাহবাগ, মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট, পলাশী, টিএসসি এলাকা হয়ে মিছিল ঢোকে সমাবেশস্থলে। কেউ জাতীয় পতাকা, কেউবা দলীয় গেঞ্জি ও পাঞ্জাবি পরে অংশ নেন। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থেকে আসা সোহেল হাসান জানান, তাঁদের এলাকা থেকেই ৪০টি বাসে প্রায় ৩০ হাজার কর্মী এসেছেন। সিরাজগঞ্জের এরশাদ আলী বলেন, ট্রেন ও বাস মিলিয়ে তাদের জেলা থেকেও ৩০-৪০ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।
নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক মাঠে রয়েছেন সকাল থেকেই। বিভিন্ন গেটে তারা আগতদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সমাবেশস্থলে খাবার পানি, মেডিকেল সহায়তা ও নামাজের স্থানসহ সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
দুপুরে দলটির নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “এই সমাবেশে আমরা জাতির সামনে আমাদের সাত দফা দাবি তুলে ধরছি। ইনশাল্লাহ, এটি স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ হিসেবে ইতিহাসে স্থান পাবে।”
সমাবেশের সাত দফা দাবি হলো:
- জাতীয় নির্বাচনে সমতাভিত্তিক লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা
- সব গণহত্যার বিচার
- প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার
- ‘জুলাই সনদ’ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন
- জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারদের পুনর্বাসন
- সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন
- প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা
পূর্বে বায়তুল মোকাররম কিংবা পল্টনের সীমিত কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এবার ঐতিহাসিক উদ্যানে এ জাতীয় সমাবেশের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী তাদের সাংগঠনিক শক্তি এবং গণভিত্তির বার্তা দিতে চায়। দলীয় নেতাদের মতে, এই সমাবেশ জাতীয় রাজনীতিতে ও আগামি নির্বাচনে একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হয়ে থাকবে।