আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবে। প্রথমবারের মতো এজলাস থেকে রায় ঘোষণার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে রয়েছেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
প্রথম মামলার রায় আজ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে এটি প্রথম মামলা, যার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনজনের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান বর্তমানে পলাতক, দুজনই ভারতে অবস্থান করছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি, সাবেক আইজিপি আল-মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। তাঁর জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা তিনি পেয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে।
পাঁচটি অভিযোগ
তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এগুলো হলো—
- উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান
- আন্দোলনকারীদের নির্মূলের নির্দেশ
- রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদকে হত্যা
- ঢাকার চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা
- আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা
প্রসিকিউশনের দাবি, তারা পাঁচটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে। তারা শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আবেদন জানিয়েছে।
পলাতক থাকায় আপিলের সুযোগ নেই
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম জানিয়েছেন, রায় হলে পলাতক থাকায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান আপিল করতে পারবেন না। আপিলের জন্য তাদের আত্মসমর্পণ বা গ্রেপ্তার হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, রায় ঘোষণার নির্দিষ্ট অংশ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে।
ইন্টারপোল রেড নোটিশ
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ চেয়ে বাংলাদেশের এনসিবি আগে আবেদন করলেও তা গ্রহণ করেনি ইন্টারপোল। রায়ে দণ্ড হলে প্রসিকিউশন আবার রেড নোটিশ চেয়ে “কনভিকশন ওয়ারেন্ট” পাঠাবে বলে জানায়।
৩৯৭ দিনের বিচারযাত্রা
২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর ‘মিসকেস’ হিসেবে মামলার সূচনা থেকে আজকের রায় পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।
মোট ৫৪ জন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। যুক্তিতর্ক শেষ হয় ২৩ অক্টোবর। গত ১৩ নভেম্বর ঘোষণা করা হয় আজ রায় দেওয়া হবে।
