মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ কুয়েতে শ্রমবাজার নিয়ে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিনের বন্ধুপ্রতীম এই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক মজবুত হলেও, সম্প্রতি রাষ্ট্রদূতের একক সিদ্ধান্ত ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে ভেঙে পড়ছে শ্রমবাজারের স্থিতিশীলতা।
বর্তমানে কুয়েতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি ক্যাপ টেক কোম্পানির ১৯০ জন কর্মী চার মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ২৭ জুলাই পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ করতে গিয়ে ১৩০ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন, কারণ তারা বেতন তো পেলেনই না, বরং ফেরত আসতে হলো খালি হাতে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ তারেক হোসেন বলেন, এসব সমস্যা তৈরি হচ্ছে কিছু অসাধু এজেন্সির কারণে, যারা ভুয়া চাহিদাপত্র দিয়ে লোক পাঠাচ্ছে। তবে ভুক্তভোগী কর্মী ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর দাবি, দূতাবাস ইচ্ছাকৃতভাবে মাসের পর মাস চাহিদাপত্র আটকে রেখে শ্রমবাজারকে হুমকির মুখে ফেলছে।
বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির জন্য মহা নিয়ামক। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসের প্রথম সাতদিনেই এসেছে ৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার (৮,১২৫ কোটি টাকা) রেমিট্যান্স। তবুও কুয়েতের মতো গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারে কর্মী নিয়োগে এ ধরনের জটিলতা উদ্বেগজনক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুয়েত দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতের একক সিদ্ধান্তে নতুন নতুন নিয়ম তৈরি করে চাহিদাপত্র সত্যায়ন বন্ধ রাখা হচ্ছে। ফলে বহু এজেন্সির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। যেমন, সেবা কনসালটেন্সির ২৫৭টি, এম ইসলাম ইন্টারন্যাশনালের ৮০০টি, মুবাশিরাহ ওভারসীজের ১৩০টি ভিসা আটকে আছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া কুয়েতে এখন বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ‘লামানা’ বাধ্যতামূলক হলেও দূতাবাসের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। নতুন বেতন কাঠামো (৭৫ কুয়েতি দিনারের বেশি) না থাকলে ১ আগস্ট থেকে কোনো চাহিদাপত্র সত্যায়ন হবে না বলেও সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। এর ফলে দেশটির নিয়োগকর্তারা ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কার মতো দেশের কর্মীদের প্রতি ঝুঁকছেন।
দূতাবাসের এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ রিক্রুটিং এজেন্সিরা বলছে, কুয়েতের শ্রমবাজারে অচলাবস্থা তৈরি হলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ।