লামিনে ইয়ামাল: বার্সেলোনার ক্ষুদে জাদুকর থেকে ইতিহাস গড়া নায়ক

Lamine Yamal

যখন অনেক তরুণ ফুটবলার নিজেদের পরিচিতি গড়ে তুলতেই সময় নিচ্ছে, তখন ১৭ বছরের এক কিশোর ইউরোপের সবচেয়ে বড় মঞ্চে লিখে চলেছেন ইতিহাস। তার নাম লামিনে ইয়ামাল। ফুটবল বিশ্বে এখন যিনি এক বিস্ময়ের নাম।

চ্যাম্পিয়নস লিগে নতুন সূর্যোদয়

বার্সেলোনা-ইন্টার মিলান চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের ৩-৩ গোলে শেষ হওয়া উত্তাল ম্যাচে সবচেয়ে আলো কেড়েছেন ইয়ামাল। এক দুর্দান্ত একক প্রচেষ্টায় গোল করে ইন্টারের পাঁচজন ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে শুধু গোলই করেননি—তিনি ছুঁয়েছেন ইতিহাস। মাত্র ১৭ বছর ২৯১ দিন বয়সে তিনি হয়ে উঠেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা, পেছনে ফেলেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পের রেকর্ড।

গোলটির সৌন্দর্য এতটাই মনমুগ্ধকর ছিল যে, প্রতিপক্ষ সমর্থকরাও অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলেন। ম্যাচ শেষে স্ন্যাপচ্যাটে ম্যানচেস্টার সিটির তারকা আর্লিং হলান্ড যখন লিখলেন, “এই ছেলেটা অবিশ্বাস্য,” তখন পুরো ফুটবলবিশ্ব তার প্রতিভার প্রতি মাথা নোয়াল।

জন্ম স্পেনে, হৃদয়ে বার্সেলোনা

লামিনে ইয়ামালের জন্ম ২০০৭ সালে, স্পেনের মাতারো শহরে। বাবার দিক থেকে তিনি মরক্কান, আর মায়ের দিক থেকে গিনি-বিসাউয়ের। তবে ছোটবেলা থেকেই তিনি বেড়ে উঠেছেন কাতালুনিয়ার মাটিতে। বার্সেলোনার বিখ্যাত ‘লা মাসিয়া’ একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তার প্রতিভা চোখে পড়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষের।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো বার্সার সিনিয়র দলে ডাক পান, যা তাকে স্পেনের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম কম বয়সী পেশাদার খেলোয়াড়ে পরিণত করে।

তুলনামূলক ঝলক: ইয়ামাল কতটা এগিয়ে?

যারা ভাবছেন ইয়ামাল কি সত্যিই ব্যতিক্রম? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ইতিহাসের দুই কিংবদন্তির সঙ্গে ১৭ বছর বয়সে তার পরিসংখ্যান:

  • ১৭ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ১৯ ম্যাচ, ৫ গোল, ৪ গোলে সহায়তা
  • ১৭ বছর বয়সী লিওনেল মেসি: ৯ ম্যাচ, ১ গোল, কোনো গোলে সহায়তা নেই
  • ১৭ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল: ১০০ ম্যাচ, ২২ গোল, ৩৩ গোলে সহায়তা

এই সংখ্যাগুলো শুধু পরিসংখ্যান নয়, ইয়ামালের প্রতিভার এক শক্তিশালী প্রমাণ। মাত্র ১৭ বছরেই এত ম্যাচ খেলা এবং নিয়মিত গোল ও অ্যাসিস্ট করা ফুটবল ইতিহাসে দুর্লভ ঘটনা।

তাঁর খেলার ধরন

ইয়ামালকে বলা হচ্ছে ‘নতুন মেসি’। বাঁ পায়ের নিয়ন্ত্রণ, বল নিয়ে দৌড়, একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়া, এবং নিখুঁত ফিনিশিং—সবকিছু মিলিয়ে যেন বার্সার হারানো ছায়া আবার ফিরে আসছে এই কিশোরের পায়ে। তবে ইয়ামালের মধ্যে আছে নিজের স্বকীয়তা, সাহস এবং অবিচল আত্মবিশ্বাস।

ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি

লামিনে ইয়ামালের ফুটবল যাত্রা মাত্র শুরু। কিন্তু তার এই শুরুটাই এতটা চমকপ্রদ যে ফুটবল বিশেষজ্ঞরা তাকে নিয়ে ভবিষ্যতের “বিশ্বসেরা” হিসেবেই ভাবছেন। বার্সেলোনা এখন তাকে ঘিরেই তৈরি করছে ভবিষ্যতের রণকৌশল। সঠিক পরিচালনা ও সমর্থনের মধ্য দিয়ে যদি এগিয়ে যেতে পারেন, তাহলে বিশ্ব ফুটবল খুব শিগগিরই পেতে পারে আরেক কিংবদন্তি।