পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে আবারও এক অভিবাসী দোকানদার ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন। দোকানের ক্যাশ টিল লুটের উদ্দেশ্যে চালানো এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লিসবনের ক্যাম্পোলিদে এলাকার রুয়া দো ক্যাম্পোলিদে সড়কে।
পুলিশ ও স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এক মুখোশধারী দুর্বৃত্ত দোকানে ঢুকে ক্যাশ টিল দাবি করে। এ সময় দোকানে একাই কর্মরত ছিলেন তরুণ ওই অভিবাসী দোকানদার। দুর্বৃত্তের হামলার মুখেও তিনি প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। একপর্যায়ে বুকে একাধিক ছুরিকাঘাতে আহত হলেও হামলাকারীর মাথায় থাকা বালাক্লাভা ধরনের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলতে সক্ষম হন তিনি।
হামলার পুরো ঘটনা দোকানে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হয়েছে। এসব ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে তদন্তকারী সংস্থা জুডিসিয়ারি পুলিশ (PJ)-এর হাতে পৌঁছেছে। পুলিশ জানায়, ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে হামলাকারী শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে।
শেষ পর্যন্ত হামলাকারী দোকানের ক্যাশ টিল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে কাছাকাছি এলাকায় টিলটি খালি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
আহত দোকানদারকে গুরুতর অবস্থায় লিসবনের সান্তা মারিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম করেইও দা মানহা।
এদিকে একই দিনে পর্তুগালের মুরা এলাকায় আরেকটি সহিংস ঘটনার খবর প্রকাশ করেছে ওই সংবাদমাধ্যম। সেখানে কৃষিকাজে নিয়োজিত ১০ জন অভিবাসী যে বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন, সেখানে ভেঙে ঢুকে দুজনকে মারধর করা হয়। পরে হামলাকারীরা ওই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাম্প্রতিক এসব ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন পর্তুগালে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ‘নেতিবাচক মনোভাব’ বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিভিন্ন মানবাধিকার ও অভিবাসী সংগঠন। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এই ধরনের মনোভাব সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
এ প্রসঙ্গে সাপ্তাহিক এক্সপ্রেসো জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসেই অভিবাসীরা পর্তুগালের সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলে প্রায় ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউরো অবদান রেখেছেন। যা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা বিদেশিদের জন্য দেওয়া আর্থিক সহায়তার তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। বিশ্লেষকদের মতে, এই তথ্য অভিবাসীদের বিরুদ্ধে উগ্র ডানপন্থী দল চেগার প্রচার চালানো বার্তা ও দাবির অসারতাই তুলে ধরে।
পর্তুগালে চলমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা যত তীব্র হচ্ছে, ততই অভিবাসীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ছুরিকাঘাতের ঘটনায় প্রাণহানির খবরও পাওয়া গেছে।
এই পরিস্থিতিতে অভিবাসী নেতারা আবারও সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তাঁদের আহ্বান, দক্ষিণ এশীয় ও এশীয় বংশোদ্ভূত দোকানদাররা যেন দিনের বেলায় একা দোকান না চালান এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করেন। বৃহস্পতিবারের হামলার সময় দোকানটিতে একমাত্র কর্মী হিসেবে ওই তরুণ উপস্থিত ছিলেন।
