“আমরা AIMA-এর কাছে রেসিডেন্স পারমিট নিয়মিত করার অনুরোধ করছি।”
—এমন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে লিসবনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন শত শত প্রবাসী। তাদেরই একজন ফারিদ আহমেদ, যিনি প্রবাসী অধিকার আদায়ে কাজ করা একটি সংগঠনের প্রতিনিধি। তাঁর নেতৃত্বে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে উঠে এসেছে অভিবাসন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা, অনিয়ম ও অবিচারের নানা চিত্র।
“AIMA, আমাদের সাহায্য করুন”—এমন আহ্বান বহুবার জানানো হলেও বাস্তবে কোনো সাড়া মেলেনি। প্রবাসীদের অভিযোগ, একটিও উত্তর আসছে না, নেই কোনো প্রতিক্রিয়া। আর সমস্যার কোনো শেষ নেই।
প্রবাসী অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে রেসিডেন্স কার্ডের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। কেউ কেউ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেও কোনো অগ্রগতি দেখছেন না। যারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য জমা দিয়েছেন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছেন—তারাও অন্যায়ভাবে রিজেকশনের শিকার হচ্ছেন।
একাধিক ভুক্তভোগীর উদাহরণে দেখা গেছে, কেউ পর্তুগালে তিন বছর ধরে বৈধভাবে কাজ করছেন। হঠাৎ জানানো হয়, তিনি পূর্বে অন্য একটি শেনজেন দেশে ছিলেন, তাই তাকে ‘অনিয়মিত’ ঘোষণা করে তার আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
আরেক ভুক্তভোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তিনি পূর্বে ইসরায়েলের মতো কোনো শেনজেন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন, পরে তা প্রত্যাহার করে পর্তুগালে এসে আইনি ভিত্তিতে কাজ শুরু করেন, কর পরিশোধ করেন এবং সমাজে অবদান রাখেন।
তবু তিন বছর পর AIMA জানিয়েছে—“আপনার অন্য দেশে পূর্বের রেকর্ড আছে, তাই আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।” অথচ এসব প্রবাসী কোনো অপরাধে জড়িত নন—তাদের অপরাধ ‘শূন্য’।
পরিবার আনার প্রক্রিয়াও থমকে গেছে
ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশনের (পারিবারিক পুনর্মিলন) আবেদন করেও অনেকেই বছরের পর বছর ধরে পরিবার আনতে পারছেন না। এই প্রক্রিয়াও এখন সম্পূর্ণভাবে স্থগিত।
এমন পরিস্থিতিতে বহু আবেদনকারী আইনি সহায়তার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু সেখানে গিয়েও একটি সাধারণ অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে আইনজীবীর সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। আইনজীবীর মাধ্যমেও যদি কোনো উত্তর না আসে, তাহলে প্রক্রিয়াগুলো স্থবির হয়ে পড়ে।
AIMA-এর পক্ষ থেকে সহযোগিতার দাবি
প্রবাসীরা মনে করছেন, আদালতের কার্যক্রমে দ্রুত অগ্রগতি ও রায় কার্যকর করতে AIMA-এর সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ অভিবাসন-সংক্রান্ত বেশিরভাগ বিষয়েই AIMA-এর আইনি কর্তৃত্ব রয়েছে।
এখন শুধু পরিবার আনার আবেদনই নয়, অনেকেই রেসিডেন্স কার্ড রিনিউয়ের জন্য এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছেন। যারা প্রথমবারের মতো IAN (বর্তমানে AIMA)-এ আবেদন করেছিলেন, তারাও মাসের পর মাস ধরে কোনো অগ্রগতি পাচ্ছেন না।
এই সমস্যা শুধু এশীয়দের নয়
এই পরিস্থিতির শিকার শুধু বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান বা নেপালের মতো এশীয় দেশের প্রবাসীরা নন—অন্যান্য দেশের অভিবাসীরাও একই দুর্ভোগে ভুগছেন। সকাল ৮টা নাগাদ লিসবনের অফিসের সামনে গিয়ে দেখা যায়—দীর্ঘ লাইন, হতাশার চেহারা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত মানুষ।