এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ভেনিজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। ভেনিজুয়েলায় গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং স্বৈরশাসন থেকে শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক গণতন্ত্রে উত্তরণের অবিরাম সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নরওয়ের নোবেল কমিটি।
গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১১টা এবং বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। নোবেল ইনস্টিটিউটের এই ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করা হয় তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
নোবেল কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়,
“ভেনিজুয়েলা একসময় গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ দেশ ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি এক নিষ্ঠুর, কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। দেশে ভয়াবহ মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকট চলছে। জনগণ দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, অথচ শাসকগোষ্ঠী নিজেদের সম্পদ বাড়াচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও দমননীতির কারণে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়,
“এই কঠিন পরিস্থিতিতে বিরোধী দলকে পরিকল্পিতভাবে দমন করা হয়েছে। নির্বাচনী কারচুপি, আইনি হয়রানি এবং গ্রেপ্তার–নির্যাতনের মধ্যেও মারিয়া কোরিনা মাচাদো গণতন্ত্রের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।”
গণতান্ত্রিক উন্নয়নের জন্য নিবেদিত সংগঠন ‘সুমাতে’ (Sumate)-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মাচাদো দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি একবার বলেছিলেন,
“এটা ছিল বুলেটের বদলে ব্যালটের লড়াই।”
রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি সবসময় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও জনগণের প্রতিনিধিত্বের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন।
এ বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার আগেই আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রাম্প দাবি করে আসছিলেন যে তিনি বিশ্বের আটটি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন এবং এ বছরের নোবেল পুরস্কার তাঁরই প্রাপ্য।
তিনি একাধিকবার বলেন,
“আমি যদি এ বছরের নোবেল না পাই, তবে এটি হবে আমেরিকার জন্য বড় অপমান।”
তবে শেষ পর্যন্ত নোবেল কমিটি ট্রাম্পকে নয়, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের লড়াইয়ে অনন্য অবদান রাখার জন্য মাচাডোকেই শান্তির প্রতীক হিসেবে বেছে নেয়।
২০২৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিল জাপানের সংগঠন ‘নিহন হিদানকিয়ো’ (Nihon Hidankyo)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক হামলায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের নিয়ে গঠিত এই সংগঠন বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানিত হয়।