লিসবনের কনসুলার অফিসে কাগজপত্রের জটিলতায় অভিবাসীদের রাস্তায় রাত যাপন

Lisbon consular offices

পর্তুগালের কনসুলার অফিসগুলোর সামনে প্রতিদিন ভোরের আগেই শত শত অভিবাসীর দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ কার্ডবোর্ডে, কেউবা বাগানের বেঞ্চে রাত কাটাচ্ছেন, শুধু একটি অপরিহার্য নথিপত্র পাওয়ার আশায়—অপরাধমূলক রেকর্ড সার্টিফিকেট।

পর্তুগালের অভিবাসন সংস্থা AIMA এই সার্টিফিকেটকে আবেদনের একটি বাধ্যতামূলক অংশ করে তোলার পর থেকেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এই নথি ছাড়া আবাসন নবায়ন বা বৈধকরণ প্রক্রিয়া অচল হয়ে পড়ে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, লিসবনের কনসুলার অফিস প্রতিদিন মাত্র ৩০ থেকে ৬০ জনের আবেদন গ্রহণ করছে। ফলে অনেকেই দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন, রাস্তায় রাত কাটাচ্ছেন।

টোমার থেকে আগত এক নারী জানান, “রাতে ১০টায় বাসে চড়ে মধ্যরাতে এসে পৌঁছেছি। আগেও ভোরে এসেছি, কিন্তু দেখা হয়নি।”

৪৯ বছর বয়সী অ্যাঙ্গোলার অভিবাসী ফাওস্টিনো বলেন, “আমি ভালো জীবনের আশায় পর্তুগালে এসেছি, এখন ফ্যাক্টরিতে কাজ করছি। কিন্তু কাগজপত্র ঠিক রাখা এত কঠিন হবে ভাবিনি।”

বুধবার কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন ৩৪ বছর বয়সী নুরিয়া। তিনি বলেন, “আজকে কিছু কর্মী বাড়ানো হয়েছে, কিছুটা গতি এসেছে। আমার মালিকও সহানুভূতিশীল — যা এখানে বিরল।”

অধিকাংশ লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তিই অ্যাঙ্গোলার নাগরিক, কারণ পর্তুগালে অবস্থিত অ্যাঙ্গোলার কনসুলেটগুলো এই সার্টিফিকেট ইস্যু করে না। ফলে লিসবন ও পোর্তোর অফিসগুলোতেই সব চাপ এসে পড়েছে।

২৬ বছর বয়সী ছাত্রী মিলেনা বলেন, “আমি অ্যাঙ্গোলায় ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছি। পড়াশোনায় ভালো করলেও এখানে থাকার মতো বাড়ি পাওয়া অসম্ভব, আর সরকারি কাজকর্ম মানেই এক ঝামেলা।”

পোর্তোতেও একই অবস্থা। বৃহস্পতিবার সকালে ২৫০ জনের মতো মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। জেসিকা আন্তোনিও বলেন, “দুই দিন ধরে এখানে আছি। খুব কষ্টের মধ্যে আছি।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অফিসের সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত করেছে এবং অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। তবুও যারা দিনে দেখা পান না, তাদের পরদিন আবার আসতে বলা হয়, যা লাইনের দৈর্ঘ্য ও চাপ আরও বাড়াচ্ছে।

তবে সবকিছুর পরও অনেকে হার মানছেন না। ৫৪ বছর বয়সী রোসালিনা বলেন, “আমরা অ্যাঙ্গোলানরা কাজ করতে ভালোবাসি — তাই চাকরি পাই। কিন্তু কাগজপত্র ঠিক রাখা সবচেয়ে কঠিন কাজ।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিবাসীদের বৈধকরণ প্রক্রিয়ার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি পর্তুগালের প্রশাসনিক প্রস্তুতির ঘাটতিকে তুলে ধরেছে। প্রয়োজন আরও কার্যকর ব্যবস্থা, যাতে মানুষকে আর রাস্তায় রাত কাটাতে না হয়।