মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: “ভুল তথ্য ছড়াবেন না, আমরা শিক্ষক, রাজনীতিবিদ নই”

milestone school teacher speaks after plane crash

উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ভয়াবহ ঘটনায় যখন গোটা জাতি স্তম্ভিত, তখন সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তের একজন প্রত্যক্ষদর্শী ও বেঁচে ফেরা শিক্ষক পূর্ণিমা দাস নিজের সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্য ও গুজবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

বুধবার (২৩ জুলাই) বিকেলে ফেসবুকে দেওয়া একটি আবেগঘন স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন,
“হাত জোর করে বলছি, ভুল তথ্য ছড়াবেন না। মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলবেন না। আমরা শিক্ষক, রাজনীতিবিদ নই।”

তিনি জানান, মাইলস্টোনের হায়দার আলী ভবনে ক্লাস নেয়ার সময় তিনি নিজেও আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলেন।

“আমিও আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলাম, আমার চেয়ে বেশি আপনারা জানবেন না তাই না?” — উল্লেখ করেন তিনি।

স্ট্যাটাসে শিক্ষক পূর্ণিমা দাস বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেন,
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় ‘স্কাই’ ও ‘ক্লাউড’ সেকশনসহ বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে কীভাবে শিক্ষার্থীরা ছিল এবং শিক্ষকরা বাচ্চাদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরাও জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছিলেন।

তিনি জানান, স্কাই সেকশনে অনেকটা সময় পর্যন্ত একজন শিক্ষক বাচ্চাদের বের করে অন্য সেকশনে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করেন। তবে ৫–৬ জন শিক্ষার্থী যাদের হয়তো করিডোর বা সিঁড়িতে থাকা অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটে, তাদের হারিয়ে ফেলা হয়েছে।

সবচেয়ে বেদনাদায়ক তথ্যটি উঠে আসে ক্লাউড সেকশন প্রসঙ্গে।
পূর্ণিমা দাস বলেন,

“মাহরীন মিস, মাসুকা মিস ও মাহফুজা মিস বাচ্চাদের বের করতে গিয়ে ঝলসে যান। মাহরীন ও মাসুকা মিসকে আমরা হারিয়েছি। মাহফুজা মিস এখনো লাইফ সাপোর্টে আছেন। তার জন্য দোয়া চাই।”

তিনি আরও জানান, পাশের ক্লাস ময়না, দোয়েল, টিউবারোজ ও ওয়াটারলিলি ক্লাসগুলোতেও বাচ্চারা ছিল, যেখানে কেউ কেউ আহত হয়, তবে অনেকেই নিরাপদে উদ্ধার হয়।
“দোয়েল ক্লাসের একটি বাচ্চা আর নেই।” — বলেন তিনি।

গুজব ও লাশ ‘গুম’ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ

পূর্ণিমা দাসের স্ট্যাটাসে সবচেয়ে স্পষ্ট বার্তা ছিল কিছু মানুষের ছড়ানো ‘লাশ গুম’ এবং মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে বলার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে।

“যারা বলছেন লাশ গুম করা হয়েছে, তাদের কী পরিমাণ মানসিক সমস্যা আছে তা বুঝি না। আমরা শিক্ষক, একজন বাচ্চাকে হারালে তার লাশ অন্তত তার বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”

তিনি আরও লেখেন,

“আপনারা যত মৃতের সংখ্যা বলছেন, সেটা একেবারে সম্ভব না। ভুল তথ্য ছড়ানো বন্ধ করুন।”

“আমরা সবাই দোয়া করি”

শেষে তিনি আহ্বান জানান—
“আসুন আজ আমরা প্রার্থনা করি, প্রতিটা ফুলের জন্য যারা অকালে ঝরে গেলো। আমাদের শিক্ষক, স্টাফ আর সেই ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য।”