বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে ভারতের আদানি গ্রুপকে মীরসরাইয়ে ৯০০ একর জমি দেওয়ার বিষয়ে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রকল্প বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্থানীয় জনগণের স্বার্থের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
২০১৭ সালের ৭ থেকে ১০ এপ্রিল শেখ হাসিনা ভারতের বিশেষ আমন্ত্রণে দিল্লি সফর করেন। ওই সফরে দুই দেশের শীর্ষ বৈঠকে মীরসরাইয়ে আদানি গ্রুপকে ১০৫৫ একর জমি দেওয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়। পরে বাংলাদেশ ১৫৫ একর কমিয়ে ৯০০ একর জমি দিতে সম্মত হয়। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) দ্রুত কার্যক্রম শুরুর ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই ৯০০ একর জমির কোনো নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ হয়নি। সব অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজ করবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের কোনো সংস্থা বা নাগরিক সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রকল্পের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে ভারতের হাতে, বাংলাদেশ কেবল পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকবে।
মীরসরাইয়ের এই এলাকা বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এবং ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে।
স্থানীয় কৃষকরা জমি হারানোর আশঙ্কায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সামরিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, “শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শেখ হাসিনা ভারতের কাছে এত বড় জমি বিনামূল্যে দিয়েছেন। বাংলাদেশ এখানে কোনো লাভ পায়নি, এটি ভারতের একতরফা সুবিধার প্রকল্প।”
গবেষণা প্রতিষ্ঠান নয়া দালানের চেয়ারম্যান মুজাহিদুল ইসলাম মন্তব্য করেছেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে মীরসরাইয়ে একটি ছোট ভারত তৈরি হবে, যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি।”
বর্তমানে প্রকল্পটি স্থগিত রয়েছে এবং পুনঃমূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় আছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে স্থানীয়দের প্রবেশাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, অতিরিক্ত ৭০০ একর জমি এখন অবমুক্ত অবস্থায় আছে।