দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার আট দেশে গতকাল শুক্রবার আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিয়ানমার। দেশটিতে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। প্রাথমিক খবরে প্রায় ৭০০ জন নিহতের কথা জানানো হলেও, আজ শনিবার সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১,০০২ জন এবং আহত হয়েছেন ২,৩৭৬ জন।
মিয়ানমার ও প্রতিবেশী দেশগুলোর পরিস্থিতি
প্রতিবেশী থাইল্যান্ডেও ভূমিকম্পের প্রভাব ভয়াবহ ছিল। ব্যাংককে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। তবে মিয়ানমার থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন, কারণ দেশটিতে বর্তমানে গৃহযুদ্ধ চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। কেন্দ্র ছিল মান্দালয় থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে এবং ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ১০ কিলোমিটার গভীরে। প্রধান ভূমিকম্পের ১২ মিনিট পরই ৬.৪ মাত্রার একটি পরাঘাত (আফটারশক) অনুভূত হয়।
উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং জানিয়েছেন, ‘হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’ সরকার জানিয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে আহত ব্যক্তিদের জন্য জরুরি রক্তের প্রয়োজন।
চীন ও রাশিয়া ইতোমধ্যে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, ইয়াঙ্গুনে পৌঁছেছে ৩৭ সদস্যের একটি চীনা উদ্ধারকারী দল। রাশিয়াও ১২০ সদস্যের উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে।
জাতিসংঘ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমিয়ে আনার ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের কারণে কিছু বিশেষজ্ঞ এ আশ্বাস নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
মিয়ানমারে বিপর্যয়ের চিত্র
ভূমিকম্পের ফলে মিয়ানমারের মান্দালয়ে অনেক ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে, যার মধ্যে শহরের সবচেয়ে বড় মঠও রয়েছে। রাজধানী নেপিডোতে বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ইরাবতী নদীর ওপর আভা সেতু ধসে পড়েছে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে একটি বহুতল ভবনসহ তিনটি নির্মাণাধীন স্থাপনায় অন্তত ১০১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকের আটকে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জরুরি অবস্থা জারি
ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের নেপিডো, মান্দালয়, সাইগাইংসহ ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করেছে জান্তা সরকার। আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো বলছে, ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
বিশ্বের ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের একটি মিয়ানমার। অতীতে ভূমিকম্পে দেশটির বিভিন্ন জনবহুল এলাকা কেঁপে উঠলেও এবার শহরগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউএসজিএসের অনুমান অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।