আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে—এমন ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই ঘোষণা দেন।
তিনি জানান, গণভোটে চারটি বিষয়ের ওপর একটি প্রশ্নে ভোটগ্রহণ করা হবে। গণভোটে পাস হলে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা। এর আওতায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। সংবিধান সংশোধনের জন্য এই উচ্চকক্ষের অনুমোদন বাধ্যতামূলক হবে।
এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন করা হয়। ভাষণে ইউনূস বলেন, “আমরা সব বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণভোটে চারটি মূল বিষয়ে এক প্রশ্নে ভোট নেওয়া হবে। প্রশ্নটি হবে:
‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই সনদে বর্ণিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’
এই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১️. নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো জুলাই সনদ অনুযায়ী গঠন,
২️. দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও উচ্চকক্ষের অনুমোদনব্যবস্থা,
৩️. সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি ও প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ সীমিতকরণসহ ৩০টি সংস্কার বাস্তবায়ন,
৪️. অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়ন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট পেলে নতুন সংসদ নির্বাচনের পর ১৮০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করা হবে। এরপর দলগুলোর ভোটের অনুপাতে গঠিত হবে ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ।
ভাষণে তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার তিনটি মূল দায়িত্বে কাজ করছে—হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর।
তিনি আরও জানান, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আর্থিক স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে ইউনূস জানান, আগামী সপ্তাহে মায়ার্স্ক গ্রুপের সহযোগী এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে ৫৫০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর হবে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে ইউরোপের সর্বোচ্চ একক বিনিয়োগ।
ভাষণের শেষাংশে ইউনূস বলেন, “প্রায় দেড় যুগ পর জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগে প্রস্তুত। আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
তিনি আহ্বান জানান, “জাতি নতুন বাংলাদেশ গড়ার দ্বারপ্রান্তে—আমরা যেন ঐক্য ও সহিষ্ণুতায় এগিয়ে যাই।”
