জুলাই বিপ্লবের অগ্রনায়ক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হচ্ছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে অসপ্রে এভিয়েশনের একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আহত হাদিকে নিয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের হাসপাতাল ও সিঙ্গাপুরের চিকিৎসাব্যবস্থার মধ্যে বড় কোনো পার্থক্য নেই। তবে হাদির শরীরে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে এ বিষয়ে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জাফর, হাদির ভাই ওমর বিন হাদির—এদের অংশগ্রহণে একাধিক জরুরি কল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে টানা দুদিন সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার একাধিক হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
ডা. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে হাদির শারীরিক অবস্থার কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। সোমবার দুপুরে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মেডিকেল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল এবং ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাক্সিডেন্ট অ্যান্ড ইমার্জেন্সি বিভাগে তার চিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন এবং হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
এদিকে হাদির জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, তার সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। কিডনি ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা সচল থাকলেও মস্তিষ্কে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে সর্বোচ্চ মৃত্যুঝুঁকি রয়ে গেছে।
চিকিৎসা বোর্ডের সদস্য ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক এবং ন্যাশনাল হেলথ অ্যালায়েন্সের সদস্য সচিব আবদুল আহাদ জানান, নতুন করে করা সিটি স্ক্যানে হাদির মস্তিষ্কে অক্সিজেনস্বল্পতা ধরা পড়েছে।
রোববার দুপুরে সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনায় বসে মেডিকেল বোর্ড। বোর্ডের প্রধান এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. জাফর ইকবাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, হাদির মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় আরও বেড়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল থাকলেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যায়নি।
এছাড়া ব্রেন স্টেমে আঘাত ও অতিরিক্ত ফোলার কারণে রক্তচাপের ওঠানামা হচ্ছে। হৃদস্পন্দন কিছুটা বেশি থাকায় রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগীর সার্বিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন এবং সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
