পর্তুগাল জব সিকার ভিসা (Portugal Job Seeker Visa) বলতে বোঝায় চাকরি খোজা বা চাকরি সন্ধানকারী ভিসা। আপনি কেবল এই ভিসাতে চাকরি খুজতে আসতে পারবেন। আর এজন্য এই ভিসাটিকে বলা হয়েছে জব সিকার ভিসা বা জব সার্চ ভিসা। পর্তুগাল জব সিকার ভিসা হল একটি 6 মাস মেয়াদী ভিসা যা বাংলাদেশী পেশাদারদের পর্তুগালে চাকরির সন্ধান করার জন্য এই ভিসা দিয়ে থাকে। যা আপনাকে পর্তুগালে কর্মজীবন এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। যারা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে স্টুডেন্ট, ভিজিট এবং ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে স্বপ্নের দেশ পর্তুগালে যেতে চান তাদের অবশ্যই পর্তুগাল জব সিকার ভিসা একটি ভাল উপায় হতে পারে।
পর্তুগাল জব সিকার ভিসা কতজন কর্মী নিবে
২০২৩ সালে তারা ঘোষণা করেছিল যে তারা বিভিন্ন দেশ থেকে ৮০,০০০ কর্মী নিয়োগ করবে। সিকার ভিসা 2023 সালে চালু করা হয়েছিল এবং বর্তমানেও এটি কার্যকর। এই সংখ্যাটি সমস্ত ক্ষেত্র এবং ভিসা প্রকার (যেমন জব সিকার, স্টুডেন্ট, পরিবার পুনঃমিলন) অন্তর্ভুক্ত করে।
জব সিকার ভিসার জন্য কতজন কর্মী নিয়োগ করা হবে তা নির্ভর করবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর:
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি: পর্তুগালের অর্থনীতি ভালো করলে তারা বেশি কর্মী নিয়োগ করতে পারে।
শ্রমের চাহিদা: নির্দিষ্ট পেশাগুলিতে শ্রমের ঘাটতি থাকলে তারা সেই ক্ষেত্রে বেশি কর্মী নিয়োগ করতে পারে।
আবেদনকারীদের যোগ্যতা: যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্য আবেদনকারী থাকে তবে তারা বেশি কর্মী নিয়োগ করতে পারে।
বর্তমানে, পর্তুগালে শ্রমের ঘাটতি রয়েছে বিশেষ করে কৃষি, নির্মাণ, পর্যটন এবং রেস্তোরাঁ শিল্পে। সুতরাং, জব সিকার ভিসার মাধ্যমে পর্তুগালে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা ভালো। আপনার আবেদনের সুযোগ বৃদ্ধি করতে, নিশ্চিত করুন যে আপনার প্রাসঙ্গিক শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাদার অভিজ্ঞতা এবং পর্তুগিজ ভাষার দক্ষতা রয়েছে।
পর্তুগাল জব সিকার ভিসা মেয়াদ কতদিন
পর্তুগাল জব সিকার ভিসার মেয়াদ 6 মাস হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে, আপনি আরও 2 মাস জন্য মেয়াদ বাড়াতে পারবেন, তবে এর জন্য আপনাকে আবেদন করতে হবে এবং অনুমোদন পেতে হবে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই চাকরি খুঁজে পেতে হবে এবং আপনার নিয়োগকর্তার কাছ থেকে কাজের চুক্তি পেতে হবে। আপনি যদি চাকরি না খুঁজে পান, অথবা আপনার ভিসা মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তাহলে আপনাকে অবশ্যই পর্তুগাল ত্যাগ করতে হবে।
পর্তুগাল জব সিকার ভিসা কারা আবেদন করতে পারবে
এই ভিসার জন্য আবেদন করার জন্য, আপনাকে অবশ্যই কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হবে। প্রথমত, আপনার ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। ডিগ্রিটি মান্যতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান থেকে হতে হবে এবং আপনার আবেদন করা পদের সাথে প্রাসঙ্গিক হতে হবে। দ্বিতীয়ত, আপনার প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে পেশাদার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অভিজ্ঞতা কমপক্ষে 2 বছরের হতে হবে এবং মান্যতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানে অর্জিত হতে হবে। তৃতীয়ত, আপনার পর্তুগালে থাকার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সঙ্গতি থাকতে হবে। আপনাকে বৈধ ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে যা গত 3 মাসের আয় প্রদর্শন করে। প্রতি মাসে আপনার আয় €760 টাকার বেশি হতে হবে। এই তিনটি প্রধান যোগ্যতা ছাড়াও, আপনার বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে, পর্তুগালে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং পর্তুগালে থাকাকালীন বৈধ স্বাস্থ্য বীমা থাকতে হবে। পর্তুগিজ ভাষার কমপক্ষে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়, তবে এটি অপরিহার্য নয়। আপনার যদি এই সমস্ত যোগ্যতা থাকে, তাহলে আপনি পর্তুগাল জব সিকার ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
কোন ক্যাটাগরীতে আবেদন করা যাবে
পর্তুগাল জব সিকার ভিসার জন্য আবেদন করার জন্য একক ক্যাটাগরি নেই। আপনার যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং আগ্রহের উপর নির্ভর করে আপনি বিভিন্ন ধরণের চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। কিছু সাধারণ ক্ষেত্র যেখানে পর্তুগালে চাকরির সুযোগ রয়েছে: তথ্যপ্রযুক্তি (IT), পরিষেবা (যেমন পর্যটন, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল), প্রকৌশল, নির্মাণ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা।
পর্তুগাল জব সিকার ভিসা আবেদন
বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পর্তুগাল জব সিকার ভিসার জন্য আবেদন করা সম্ভব নয় কারণ ঢাকায় পর্তুগালের দূতাবাস নেই। সেজন্য, দিল্লিতে অবস্থিত পর্তুগালের দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। যেকোনো তৃতীয় দেশ থেকে আবেদন করতে পারবেন যেখানে পর্তুগালের দূতাবাস বা কনস্যুলেট রয়েছে। যেমন আপনি সৌদি আরব, ওমান, কাতার, মালয়েশিয়া ইত্যাদির মতো যেকোনো দেশ থেকে আবেদন করতে পারবেন। আপনাকে অবশ্যই সেই দেশের ভিসা প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করতে হবে যেখান থেকে আপনি আবেদন করছেন।
পর্তুগাল জব সিকার ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
আপনার আবেদন অনুমোদিত হওয়ার জন্য, আপনাকে অবশ্যই নিম্নলিখিত নথিপত্র জমা দিতে হবে:
আবেদন ফর্ম
- আপনি অনলাইনে SEF (Serviço de Estrangeiros e Fronteiras) ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করতে পারেন।
- ফর্মটি পূরণ করুন এবং সাবধানে স্বাক্ষর করুন।
পাসপোর্ট
- আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে আপনার ভ্রমণের পর অন্তত 6 মাস।
- আপনার পাসপোর্টে কমপক্ষে দুটি ফাঁকা পাতা থাকতে হবে।
পাসপোর্ট আকারের ছবি
- 2 সাম্প্রতিক, পাসপোর্ট আকারের ছবি (সাদা পটভূমিতে)।
- ছবিগুলিতে আপনার মুখ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হতে হবে এবং আপনার মাথা সামনের দিকে থাকতে হবে।
ডিগ্রি সনদের ফটোকপি
- আপনার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের ফটোকপি জমা দিন।
- সনদটি ইংরেজিতে বা পর্তুগিজ ভাষায় অনুবাদ করা উচিত।
অভিজ্ঞতা সনদের ফটোকপি
- প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে আপনার কর্মসংস্থানের অভিজ্ঞতার প্রমাণ সহ সমস্ত সনদের ফটোকপি জমা দিন।
- প্রতিটি নথিতে আপনার কর্মপদ, কর্মসংস্থানের সময়কাল এবং কর্তব্যের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকতে হবে।
- সনদগুলি ইংরেজিতে বা পর্তুগিজ ভাষায় অনুবাদ করা উচিত।
আর্থিক সঙ্গতির প্রমাণ
- আপনার আর্থিক সঙ্গতির প্রমাণ জমা দিন যা দেখায় যে আপনার পর্তুগালে থাকাকালীন নিজেকে সমর্থন করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ আছে।
- এটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বেতনের স্লিপ বা অন্যান্য আর্থিক নথি হতে পারে।
স্বাস্থ্য বীমা
- আপনাকে পর্তুগালে থাকাকালীন সমস্ত চিকিৎসা খরচের জন্য কভার করে এমন একটি বৈধ স্বাস্থ্য বীমা কভারেজের প্রমাণ জমা দিতে হবে।
পর্তুগালে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনার প্রমাণ
- আপনাকে পর্তুগালে আপনার থাকাকালীন সময় শেষে আপনার দেশে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনার প্রমাণ জমা দিতে হবে।
- এটি একটি ফেরতের টিকিট, আপনার দেশে একটি চাকরির প্রস্তাব বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথি হতে পারে।
পর্তুগাল জব ভিসার জন্য আবেদন করতে আপনারা উপরোক্ত বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে বুঝে আবেদন করবেন। এই ভিসাটি সত্যিই আপনার জন্য খুবই উপকারী হবে। কারণ আপনার সিজনাল ভিসার জন্য ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ না করে ১ থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে পর্তুগাল গিয়ে ৬ মাসের মধ্যে আশাকরি চাকরি খুজে পেয়ে যাবেন।