পর্তুগালে অধিকাংশ মানুষের বার্ষিক আয় কত?

Annual income of people in Portugal

পর্তুগালে কি সত্যিই মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে, নাকি সংখ্যাগুলো অন্য গল্প বলছে? সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৩ সালের আয়কর পরিসংখ্যান জানাচ্ছে এক চমকপ্রদ বাস্তবতা—দেশের বেশিরভাগ মানুষের বার্ষিক আয় এখনও €১৩,৫০০-এর নিচে। এই পরিসংখ্যান শুধু অর্থনৈতিক বৈষম্যের ইঙ্গিতই দেয় না, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তাও হতে পারে।

রুই ও মারিয়া, লিসবনের শহরতলিতে বসবাসকারী একটি দম্পতি, দু’জনেই কাজ করেন—রুই একটি ক্যাফেতে, মারিয়া একটি স্থানীয় দোকানে। অথচ বছরের শেষে তারা যখন কর ফাইল করে, তাদের সম্মিলিত আয় ১৩,০০০ ইউরো ছাড়িয়ে যায় না। বিষয়টি শুধু রুই-মারিয়ার নয়—এটি এখন পর্তুগালের একটি সাধারণ চিত্র।

সম্প্রতি প্রকাশিত ২০২৩ সালের আয়কর পরিসংখ্যান বলছে, অধিকাংশ পর্তুগীজ নাগরিকের বার্ষিক আয় €১৩,৫০০ এর নিচে। ২০২৪ সালে জমা দেওয়া এই রিপোর্ট অনুসারে, ১,০৩৬,৫১৪টি পরিবার €৫,০০০ থেকে €১০,০০০ এর মধ্যে আয় করেছে, এবং ১,১১২,৮০২টি পরিবার ছিল যারা €১০,০০০ থেকে €১৩,৫০০ এর মধ্যে রোজগার করেছে।

তালিকার আরও নিচে চোখ রাখলে দেখা যায়, ৬৯০,৩৭২টি পরিবার এমনও আছে যারা বছরে €৫,০০০-এরও কম আয় করেছে। আশ্চর্যের বিষয়, এই সংখ্যাটি আগের বছরের তুলনায় ১.৪৮% বেড়েছে।

পরিসংখ্যানে উচ্চ আয়কারী পরিবারের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য, তবে তা মোট আয়কর দাতার তুলনায় নগণ্য। ২০২৩ সালে, ৭৪,৬৪৭টি পরিবার ছিল যারা €১,০০,০০০ থেকে €২,৫০,০০০ এর মধ্যে আয় করেছে এবং মাত্র ৬,৪১০টি পরিবার ছিল যাদের বার্ষিক আয় €২,৫০,০০০ এরও বেশি। এই দুই শ্রেণী মিলিয়ে মাত্র ১.৩৫% করদাতাকে প্রতিনিধিত্ব করে।

অথচ আগের বছর (২০২২) এই উচ্চ আয় শ্রেণীগুলিতে পরিবার ছিল আরও কম—৬৪,৯৪০টি৫,৪০৯টি। অর্থাৎ আয় কিছুটা বাড়লেও সামগ্রিক চিত্রে তারা রয়ে গেছে ক্ষুদ্র এক অংশ হিসেবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, €৫,০০০ থেকে €১০,০০০ আয়ের পরিবারগুলোর সংখ্যা এক বছরে ১৫.৮৮% হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সালে এই শ্রেণীতে ছিল ১২,৩২,১৯৯টি পরিবার, যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১,০৩৬,৫১৪টি। এতে প্রশ্ন উঠে—এই পরিবারগুলো কি আরও নিচের আয় শ্রেণীতে নেমে গেছে, নাকি তারা উন্নীত হয়েছে? পরিসংখ্যান বলছে, অধিকাংশই নেমে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পর্তুগালে জীবনযাত্রার ব্যয়গত চাপ, মূল্যস্ফীতি এবং স্থবির মজুরি বৃদ্ধি—এই তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে নিত্যদিন বিপদে ফেলছে। রুটিন খরচ সামলাতে গিয়ে সঞ্চয় দূরের কথা, অনেকের পক্ষে মাস শেষ করাও কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।