পর্তুগাল থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের দেশত্যাগ বেড়েছে ৪০ শতাংশ, নীতিগত পরিবর্তনে ধাক্কা অর্থনীতিতে

Portugal migrant workers

গত দুই বছরে পর্তুগাল থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের দেশত্যাগের হার রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে। ২০২৪ সালে মাসিক ভিত্তিতে বিদেশি শ্রমিকদের দেশ ছাড়ার সংখ্যা গড়ে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০১৫ সালের পর সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে ব্যাংক অব পর্তুগালের বিশ্লেষণ করা সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থার (Social Security) তথ্য।

পর্তুগালের প্রভাবশালী দৈনিক এক্সপ্রেসো–এর বরাতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, বিদেশি নাগরিকদের নেট অভিবাসন—যা ২০২৩ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল—২০২৪ সালে নেমে এসেছে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৪ সালের জুনে পর্তুগিজ সরকারের ঘোষিত নতুন অভিবাসন নীতির পর থেকেই এই প্রবণতায় বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা গেছে।

নয় বছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী শ্রমিকের দেশত্যাগ

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে ১ হাজার ৯০০ বিদেশি শ্রমিক পর্তুগাল ছাড়তেন। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০০ জনে। একই বছর মোট দেশত্যাগের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৩০০। তবে ২০২৪ সালে এই সংখ্যা লাফিয়ে ৪৫ হাজারে পৌঁছায়, যা প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি।

বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুন মাস থেকে দেশত্যাগের হার দ্রুত বাড়তে শুরু করে। ওই মাসেই ডিক্রি-আইনের মাধ্যমে পর্তুগাল সরকার সেই নিয়ম বাতিল করে, যার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলে অন্তত ১২ মাস অবদান রাখলেই অভিবাসীদের বৈধতা পাওয়ার সুযোগ ছিল। এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্সি বিষয়ক মন্ত্রী আন্তোনিও লেইতাও আমারো। তিনি তখন বলেন, “ওপেন ডোর নীতি বন্ধ করা জরুরি।”

এই নীতিগত পরিবর্তনের ফলে ‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’ প্রক্রিয়াও আর গ্রহণ করা হয়নি। এর প্রভাব ছিল তাৎক্ষণিক। মে মাস পর্যন্ত যেখানে মাসিক দেশত্যাগ ছিল প্রায় ৩ হাজার, সেখানে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ তা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

শুধু দেশত্যাগ নয়, নতুন বিদেশি শ্রমিকদের প্রবেশের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ব্যাংক অব পর্তুগালের গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ২০ হাজার বিদেশি শ্রমিক পর্তুগালে প্রবেশ করতেন। ২০২৪ সালের একই সময়ে সেই সংখ্যা নেমে আসে ১২ হাজারে—প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস।

ফলে আগমন ও প্রস্থানের পার্থক্য বা নেট অভিবাসন ভারসাম্যেও বড় ধস নেমেছে। ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে মাসিক গড় নেট আগমন ছিল মাত্র ৭ হাজার, যেখানে আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ১৭ হাজার।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, “এই পরিবর্তনের মূল কারণ হচ্ছে নতুন অভিবাসীদের আগমন কমে যাওয়া।” ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়েও গড়ে মাসিক প্রবেশ প্রায় ১২ হাজারের আশপাশেই রয়ে গেছে।

কঠোর নীতি, চাপের মুখে অর্থনীতি

সরকারের কড়াকড়ি অভিবাসন নীতি এবং বিদেশি শ্রমিক প্রবেশে কঠোর অবস্থান নেট অভিবাসন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রেসিডেন্সি বিষয়ক মন্ত্রী স্বীকার করে বলেন, নতুন মডেলের সঙ্গে “অর্থনীতিকে মানিয়ে নিতে হবে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিবাসী শ্রমিকদের দেশত্যাগ সরাসরি সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলের আয় কমাচ্ছে এবং বিদেশি শ্রমিকনির্ভর খাতগুলোকে বাড়তি চাপে ফেলছে। আগামী অর্থনৈতিক বুলেটিনগুলোতে পর্তুগালের শ্রমবাজার ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে এই পরিবর্তনের প্রভাব আরও স্পষ্টভাবে উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।