ম্যাচের সেই মুহূর্তে মুখ লুকিয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ক্লান্তিতে নত হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সতীর্থদের কাঁধে ভর দিয়ে। তিনি গোল করেছিলেন, যার মাধ্যমে পর্তুগাল ২–২ গোলে ম্যাচে ফিরেছিল, কিন্তু পরে ক্লান্ত হয়ে মাঠ ছাড়েন। টাইব্রেকার চলাকালে মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি; দেখতে না পারলেও শুনতে পেয়েছিলেন গর্জন। রুবেন নেভেসের পেনাল্টি জালে জড়িয়ে পর্তুগাল দ্বিতীয়বারের মতো নেশনস লিগ জিতে নিল। রোনালদো হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লেন, চোখ থেকে নেমে এল জল।
মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় রোমাঞ্চকর এক ফাইনাল শেষে টাইব্রেকারে ৫–৩ গোলে স্পেনকে হারিয়ে ট্রফি তুলে নেয় রবার্তো মার্টিনেজের দল। এটি রোনালদোর ক্যারিয়ারের ৩৪তম শিরোপা, বয়স ৪০ হলেও বিজয়ের সেই চিরচেনা হাসি মুখে রেখেই ট্রফি তুলে ধরলেন আকাশে।
মূল খেলার গল্পটিও ছিল নাটকীয়তায় ভরপুর। মার্তিন সুবিমেন্দির গোলে এগিয়ে যায় স্পেন। এরপর নুনো মেন্ডেজ সমতায় ফেরান। বিরতির ঠিক আগে পেদ্রির পাস থেকে গোল করে স্পেনকে আবার এগিয়ে দেন মিকেল ওইয়ারসাবাল। ৬০ মিনিটে নুনো মেন্ডেজের ডিফ্লেক্টেড ক্রস থেকে ভলিতে গোল করেন রোনালদো—তাঁর ১৩৪তম আন্তর্জাতিক গোল। স্কোরলাইন ২–২।
ম্যাচে বারবার আলোচনায় ছিলেন রোনালদো ও ১৬ বছর বয়সী স্প্যানিশ বিস্ময় লামিনে ইয়ামাল। একদিকে অভিজ্ঞতার প্রতীক, অন্যদিকে ভবিষ্যতের আশা—দুই প্রজন্মের এই দ্বৈরথে শেষ হাসি হাসলেন অভিজ্ঞজন।
ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে পর্তুগালই ছিল এগিয়ে। মেন্ডেজ ও লেয়াও বারবার স্প্যানিশ ডিফেন্স ভেদ করেছেন। ৯০ মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেজের ফ্রি-কিক ঠেকান উনাই সিমন। এক্সট্রা টাইমে নেলসন সেমেদো গোল নিশ্চিত করে ফেলতে পারতেন, পাঁচ গজ দূর থেকে বল বাইরে মারেন তিনি। শেষ মুহূর্তে দিয়োগো জোতার হেডও যায় উপর দিয়ে।
সবশেষে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয় পেনাল্টিতে। পর্তুগালের পাঁচ শটের পাঁচটিই সফল—গনসালো রামোস, ভিতিনিয়া, ব্রুনো ফার্নান্দেজ, নুনো মেন্ডেজ এবং রুবেন নেভেস সবাই নিখুঁত। স্পেনের হয়ে মোরাতা চতুর্থ শটে ব্যর্থ হন, ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত সেভ করেন দিয়োগো কস্তা।
এই হারে শেষ হলো স্পেনের টানা তিন ট্রফি জয়ের স্বপ্ন। কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে তাঁর খেলোয়াড়দের একত্রিত করেন, অনুপ্রাণিত করেন, কারণ গত দুই বছরে তাঁরা জিতেছে ইউরো ও নেশনস লিগ—এই ফাইনালে যদিও ট্রফি অধরাই থেকে যায়।
এই ম্যাচ আবারও প্রমাণ করল, রোনালদো যেন হারিয়ে যান না কখনোই। ম্যাচে কখনো অনুজ্জ্বল দেখালেও সঠিক সময়ে ঠিকই হাজির হয়ে যান। জয়, ট্রফি আর গোল—এসবই রোনালদোর সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে।
আর এই নেশনস লিগ জয়, হয়তো তাঁর জাতীয় দল ক্যারিয়ারের শেষ বড় ট্রফি, যেখানে বয়স কেবল একটি সংখ্যা, আর রোনালদো? ফুটবল ইতিহাসের এক অমর কিংবদন্তি।
