বাংলাদেশে প্রবাসী আয় নতুন মাইলফলকে পৌঁছাতে চলেছে। চলতি মার্চ মাসের প্রথম ২৬ দিনে দেশে এসেছে ২৯৪ কোটি ডলার, যা এক মাসের হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, প্রতি দিন গড়ে ১১ কোটি ৩২ লাখ ডলার করে দেশে এসেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে মোট ২৫২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা মার্চে অনেকটাই ছাড়িয়ে গেছে।
ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রবাসীরা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর প্রবণতা কমে আসায় বৈধ চ্যানেলে অর্থপ্রবাহ বেড়েছে।
সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম), প্রথম আলোকে বলেন,
“প্রবাসী আয় বাড়ায় রিজার্ভের ওপর চাপ কিছুটা কমেছে। তবে ঈদের পরও এই ধারা অব্যাহত রাখা চ্যালেঞ্জ হবে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার বাধাগুলো দূর করা জরুরি।”
মার্চ মাসে রেমিট্যান্সের ধারা
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী,
প্রথম ১৫ দিনে এসেছে ১৬৬ কোটি ডলার
১৯ মার্চ পর্যন্ত এসেছে ২২৫ কোটি ডলার
২২ মার্চ পর্যন্ত এসেছে ২৪৩ কোটি ডলার
২৪ মার্চ পর্যন্ত এসেছে ২৭০ কোটি ডলার
২৬ মার্চ পর্যন্ত এসেছে ২৯৪ কোটি ডলার
গত বছরের একই সময়ে (মার্চের প্রথম ২৬ দিন) প্রবাসী আয় ছিল ১৬১ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ায় ডলারের সংকট কিছুটা কমেছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১২৩ টাকায় ডলার কিনছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, মঙ্গলবার দিন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রবাসী আয়ের উৎসেও পরিবর্তন এসেছে। আগে মধ্যপ্রাচ্য ছিল শীর্ষ অবস্থানে, এখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসছে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), বলেন,
“বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ায় বাজার স্থিতিশীল হয়েছে। তবে উৎস দেশের এই পরিবর্তন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার।”