জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, বৈধপথে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার প্রদত্ত করমুক্ত সুবিধা ও নগদ প্রণোদনার সুযোগ নিয়ে এক ব্যবসায়ী ৭৩০ কোটি টাকা দেশে এনেছেন। সোমবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও বিসিএস কর ক্যাডারদের মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান তিনি।
এত বিপুল পরিমাণ অর্থ এক ব্যক্তির দ্বারা দেশে আনার বিষয়টি কর কর্মকর্তাদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। তবে ওই ব্যক্তির নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেননি এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “নাম না বলাই ভালো। ব্যবস্থা তো নিতে হবে। ব্যবস্থা নেওয়ার পরে এমনিতেই আপনারা নাম জেনে যাবেন।”
বৈধ চ্যানেলের সুযোগে কর ফাঁকি?
বর্তমানে সরকার বৈধপথে প্রবাসী আয় দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে করমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে, পাশাপাশি আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনাও দিচ্ছে। কিন্তু কিছু ব্যক্তি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এই সুযোগকে কর ফাঁকির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “শুনলে আশ্চর্য হবেন, এমন করদাতা পাওয়া গেছে, যিনি ৭৩০ কোটি টাকা নিয়ে এলেন এবং বলছেন এটি ওয়েজ আর্নার্স ইনকাম, তাই করমুক্ত।”
দেশে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের পরিমাণ বাড়লেও অর্থনৈতিক বৈষম্য কমছে না বরং বাড়ছে। এই পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা হয়তো এগুলো দেখিনি, অথবা বুঝিনি, অথবা দেখেও না দেখার ভান করছি। ফলে কিছু ব্যক্তির জন্য বিশেষ সুযোগ তৈরি হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্যকে নষ্ট করছে।”
অনলাইন রিটার্ন ও স্বয়ংক্রিয় কর ব্যবস্থা
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানান, বর্তমানে দেশে ১ কোটি ১৩ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) রয়েছে, কিন্তু রিটার্ন দাখিল করেন মাত্র ৪০ লাখ করদাতা। ভবিষ্যতে ব্যাংকের সঙ্গে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) সংযুক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর সংগ্রহের ব্যবস্থা চালু করা হবে। এতে করদাতাদের ব্যাংক আমানত, উৎসে কর কর্তনের তথ্য ই-রিটার্ন জমার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যাবে।
মতবিনিময় সভায় ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা করদাতাদের মধ্যে ভীতি দূর করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও বেশি সমন্বয় দরকার, পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানি ও করসংক্রান্ত সব তথ্য অনলাইনে হালনাগাদভাবে প্রকাশ করা উচিত।”
দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে ও কর ফাঁকি রোধে এনবিআর আরও কঠোর মনোভাব গ্রহণ করবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান। এখন দেখার বিষয়, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতে কর ব্যবস্থার স্বচ্ছতা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়।