রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। মোট ২৩টি পদের মধ্যে ২০টিতেই জয়ী হয়েছে এই প্যানেল। তবে জিএস, ক্রীড়া ও খেলাধুলাবিষয়ক সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে তারা পরাজিত হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে রাকসু নির্বাচনের প্রধান কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দিনভর পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই বিকেলে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। এরপর রাত ৮টা ৩০ মিনিটে ভোট গণনা শুরু হয় এবং রাতভর গণনা শেষে শুক্রবার সকালে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে ১১ হাজার ৩০৫ জন ছাত্রী এবং ১৭ হাজার ৫৯৬ জন ছাত্র। ভোট পড়েছে ৬৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যার মধ্যে নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল ৬৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।
ভিপি পদে জাহিদের বড় জয়
রাকসুর ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ) ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের শেখ নূর উদ্দীন (আবীর) পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৭ ভোট।
সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে একই প্যানেলের এস এম সালমান সাব্বির ৬ হাজার ৯৭৫ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল–সমর্থিত জাহিন বিশ্বাস (এষা) পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৫১ ভোট।
শিবির–সমর্থিত প্যানেলের অন্যান্য জয়ীরা
সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক আবু সাঈদ মুহাম্মাদ নুন (সামি), সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা, সহকারী সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সাইয়িদা হাফছা, সহকারী মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সামিয়া জাহান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বি এম নাজমুছ সাকিব, সহকারী তথ্য সম্পাদক সিফাত আবু সালেহ, মিডিয়া সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, সহকারী মিডিয়া সম্পাদক আসাদুল্লাহ গালিব, বিতর্ক সম্পাদক ইমরান লস্কর, সহকারী বিতর্ক সম্পাদক নয়ন হোসেন, পরিবেশ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী পরিবেশ সম্পাদক মাসুমা ইসরাত—সবাই ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
এ ছাড়া নির্বাহী সদস্য পদে মো. দীপ মাহবুব, সুজন চন্দ্র, ইমজিয়াউল হক কামালি ও এ বি এম খালেদ জয়ী হয়েছেন।
তিন পদে জয়ী অন্য প্রার্থীরা
শীর্ষ দ্বিতীয় পদ জিএস (সাধারণ সম্পাদক), ক্রীড়া সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে অন্য প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।
জিএস পদে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাহউদ্দিন আম্মার ১১,৪৯৭ ভোট পেয়ে জয়ী হন। শিবির–সমর্থিত ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা পান ৫,৭২৭ ভোট।
ক্রীড়া সম্পাদক পদে জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় নার্গিস খাতুন নির্বাচিত হন, যিনি ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ (তোফা) জয়ী হয়েছেন।
রাতভর উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট গণনার পর এই ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকসু নির্বাচনের অধ্যায় সম্পন্ন হলো।