চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে লাশবাহী স্পিডবোট চালুর খবরটি নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন ওমানপ্রবাসী মোহাম্মদ আমীন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস—সেই লাশবাহী স্পিডবোটের প্রথম যাত্রী হয়েছিলেন তিনিই।
গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে সন্দ্বীপে পৌঁছায় ওমান সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাত প্রবাসীর লাশ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ আমীন (৩৫), যিনি মৃত্যুর এক দিন আগে ফেসবুকে লিখেছিলেন—“লাশবাহী স্পিডবোট চালু হচ্ছে, এখন আর কষ্ট হবে না।”
গত ৮ অক্টোবর ওমানের ধুকুম প্রদেশের সিদরা এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সন্দ্বীপের সাত প্রবাসী। তাঁরা সবাই মাছ শিকারের কাজ করতেন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন—মোহাম্মদ আমীন (৩৫), মো. সাহাবুদ্দিন (২৮), মো. বাবলু (২৮), মো. রকি (২৭), মো. আরজু (২৬), মো. জুয়েল (২৮) ও মোশারফ হোসেন (২৬)।
শনিবার রাত ৯টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাশগুলো গ্রহণ করেন তাঁদের স্বজনেরা। রোববার সকাল আটটায় পূর্বনির্ধারিত জানাজার স্থান সন্দ্বীপের পূর্ব সন্দ্বীপ উচ্চবিদ্যালয়ে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ পৌঁছালে এলাকায় হাজারো মানুষ ভিড় করেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে সমগ্র এলাকা।
নিহত প্রবাসী আমীন ছিলেন সারিকাইত ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আলী কব্বরের ছেলে। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। ঘরে বড় মেয়ের বিয়ের আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল পরিবার। আলী কব্বর কণ্ঠ ভার করে বলেন, “কিছুদিন পর দেশে আসবে, মেয়ের বিয়ের আয়োজন করবে বলেছিল—কিন্তু সে আর ফিরল না।”
দুর্ঘটনায় নিহত সাহাবুদ্দিনের চার মাস বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তাঁর বাবা মো. সিদ্দিক কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার জীবন ফুরাই যাইব, কিন্তু সাহাবুদ্দিনের মেয়েটার কী হইব?”
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে ছয়জনের পরিবারই অসচ্ছল। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনেরই ছোট শিশু রয়েছে। ভাঙা টিনের ঘর আর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে আছে পরিবারগুলো।
মুছাপুর ইউনিয়নের প্রবীণ আবদুল হাই (৭২) বলেন, “নিহতরা আমার আপন না হলেও ওরাই আমার সন্তান। সাতটা কফিনে সাতটা ছেলের লাশ—এমন দৃশ্য যেন আর না দেখি।”
স্থানীয়রা জানান, সন্দ্বীপে লাশবাহী স্পিডবোট চালুর পর প্রথম এই মর্মান্তিক প্রয়োগ এলাকা জুড়ে বেদনার স্রোত বইয়ে দিয়েছে। স্বপ্নপূরণের আশায় বিদেশে পাড়ি দেওয়া সাত তরুণের জীবন শেষ হলো মাটির দেশে ফিরে বাক্সবন্দী অবস্থায়।